সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
কলকাতার রাস্তায় ফিরল হলুদ ট্যাক্সির নস্টালজিয়া। পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে কলকাতার রাস্তায় চালু হলো 3000 নতুন হেরিটেজ ইয়েলো ক্যাব বা হলুদ ট্যাক্সি।
রাজ্য পরিবহন দপ্তরের চালু করা যাত্রী সাথী অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করা হলো এই হলুদ ট্যাক্সি গুলিকে।
নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইয়েলো হেরিটেজ ক্যাবস’।
Heritage Yellow cabs of Kolkata
এনএ মোবিলিটি নামে কলকাতার একটা সংস্থা এনিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গিয়েছে, বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে সংস্থা এনিয়ে মউ স্বাক্ষর করেছিল। এবার এসি হলুদ ট্যাক্সি। আজ থেকেই কলকাতার রাস্তায় দেখা যাবে এই হলুদ ট্যাক্সি।
গণপরিবহণকে আরও উন্নত করতে এবার একাধিক সংস্থা বিনিয়োগ করল রাজ্যে। মোট চারটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে রাজ্যে সরকার। আর তারই মধ্যে একটি হল এনএ মোবিলিটি প্রাইভেট লিমিটেড (NA Mobility private limited)। এই বেসরকারি অ্যাপ ক্যাব সংস্থার উদ্যোগেই কলকাতা জনপ্রিয় অ্যাম্বাসেডের হলুদ ট্যাক্সি রূপ বদলে আবার ফিরল রাজপথে। হিন্দুস্তান মোটর্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে অ্যাম্বাসেড গাড়ির উৎপাদন, তাই এনএ মোবিলিটি প্রাইভেট লিমিটেড চুক্তিবদ্ধ হয়েছে মারুতি সংস্থার সঙ্গে ৷ এই সংস্থার উৎপাদিত ওয়্যাগন আর মডেলের গাড়িটিকে হলুদ রং দিয়ে পথে নামানো হচ্ছে ৷
15 বছরের পুরোনো যেসব হলুদ ট্যাক্সি বাতিল হয়ে যাচ্ছে, সেই সব চালকরাই যাতে আবার এই নতুন হলুদ ট্যাক্সিগুলি চালাতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাই ট্যাক্সি বাতিল হয়ে গেলেও কিন্তু সেই গাড়ির চালক কর্মহীন হয়ে পড়বেন না।
বিলুপ্ত প্রায় ট্রামের মতোই হলুদ ট্যাক্সিও কলকাতার ঐতিহ্য ও আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাই, সেই ঐতিহ্য ও আবেগ রক্ষা করতেই সরকারের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি সূত্রের।
কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সির আগমন হয়েছিল ১৯৬২ সালে। সেই বছরই প্রথম হিন্দুস্তান মোটর্সের তৈরি হলুদ ট্যাক্সি (অ্যাম্বাস্যাডর) প্রথম শহরের রাস্তায় নামে। তারপর থেকে এই গাড়ি কার্যত শহরের রাস্তায় রাজত্ব করে বেড়িয়েছে। শহরের সর্বত্রই একে দেখা যেত।
কিন্তু, সেই হলুদ ট্যাক্সির অধিকাংশই এখন পুরোনো হয়ে গিয়েছে। যে কারণে গতবছর কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সির সংখ্য়া এক ধাক্কায় ১৮ হাজার থেকে কমে হয় ৭ হাজারের মতো। নিয়ম অনুসারে, পরিবেশ দূষণ রুখতে ১৫ বছরের বেশি বয়সী কোনও গাড়িই পরিবহণ পরিষেবা দিতে পারে না।
ঐতিহ্য অনুসারে, কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি বলতে হিন্দুস্তান মোটর্স সংস্থার তৈরি করা অ্যাম্বাস্যাডরকেই বোঝানো হয়। কিন্তু, ওই গাড়ির নির্মাণ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই অন্যান্য সংস্থা ও মডেলের গাড়িকেও যাতে ‘ট্যাক্সি’ পারমিট দেওয়া হয়, সেই দাবি ইদানীং উঠতে শুরু করেছিল।

সেই প্রেক্ষাপটেই নয়া নির্দেশিকা জারি করেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন। ৩১১২-ডাব্লিউটি নম্বরের ওই নির্দেশিকায় ‘লাইট প্যাসেঞ্জার ভেহিকল’-এর জন্য নির্দিষ্ট রং সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা শিথিল করার কথা বলা হয়েছে।

নতুন এই হলুদ ট্যাক্সি বা হেরিটেজ ক্যাবের বাইরে দু’দিকেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হওয়ার ব্রিজ ও শহিদ মিনার-সহ কলকাতার বিভিন্ন হেরিটেজ ছবি দেওয়া রয়েছে ৷ পরিবহণমন্ত্রী এদিন 20টি হেরিটেজ ক্যাপের উদ্বোধনের পর জানান, ধাপে ধাপে আরও গাড়ি পথে নামানো হবে। সব মিলিয়ে প্রায় 3000 এই ট্যাক্সি রাস্তায় নামবে। এই গাড়িগুলি পেট্রল ও সিএনজি-তে চলবে।অ্যাম্বাসেডর হলুদ ট্যাক্সি বন্ধ হয়ে গেলেও যাতে হলুদ ট্যাক্সির সঙ্গে কলকাতার আবেগ যাতে শেষ না-হয়, তাই পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ উদ্যোগে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করল এই ইয়ালো ট্যাক্সি ক্যাব। সরকারের যাত্রী সাথী অ্যাপের মাধ্যমে বুক করা যাবে এই হেরিটেজ ইয়েলো ক্যাব।

আপাতত গাড়িগুলিকে যাত্রী সাথী আপের সঙ্গে যুক্ত করা হবে অর্থাৎ এই গাড়িগুলি বুক করতে হলে যাত্রী সাথে অ্যাপের মাধ্যমেই বুক করতে হবে। প্রসঙ্গত এই আপ ক্যাপ সংস্থায় গাড়ি চালাতে হলে অন্যান্য সংস্থায় চালকদের ভাড়ার থেকে যে কমিশন কাটার ব্যবস্থা রয়েছে, এইখানে তেমনটা হবে না। অর্থাৎ ট্রিট পিছু চালকদের কোনও কমিশন দিতে হবে না। গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব সংস্থার।
তবে গাড়ির জ্বালানি এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে চালকদের একটা মূল্য তুলে দিতে হবে সংস্থার হাতে ৷ সেই মূল্যটি কত হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। চালকদের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা দেবে এই সংস্থা। চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া নিয়ে সংস্থাটি পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবে।