সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ এবং অশান্তির ঘটনার জল গড়াল উচ্চ আদালতে। এই নিয়ে একাধিক জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই নিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বেশ কয়েকজন। আবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পাশাপাশি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে মামলা করার আবেদন জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীদের অভিযোগ, গত শনিবার যাদবপুরের অশান্তির দিন পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেনি। আক্রান্ত হয়েছে এসএফআই, অথচ পুলিশ ছাত্রদের মেসে তল্লাশি করছে। দ্রুত শুনানি প্রয়োজন।
এদিকে, যাদবপুর ছাত্রদের তরফে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি। যাদবপুরে নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একটি জনস্বার্থ মামলা কলেজের নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিচারপতির ঘরে রয়েছে। সেই মামলায় হলফনামা দিতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। চিঠি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার দ্রুত শুনানি হবে কিনা পরে সিদ্ধান্ত নেবে বেঞ্চ।
জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মামলার উল্লেখে প্রধান বিচারপতি প্রথমে বলেছিলেন, মামলাকারী যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকের কাছে যান। তিনি বলেন, ‘আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক নই’। তবে পরে নাকি মামলাকারীর বক্তব্য শুনে উচ্চ আদালতে সেই মামলা করার অনুমতি দেন জস্টিস শিবজ্ঞানম।
জানা গিয়েছে, মামলাকারী আবেদন করেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ আউট পোস্ট করার নির্দেশ দেওয়া হোক এবং পড়ুয়াদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। মামলাকারী অভিযোগ করেন, উপাচার্য পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে। এই মামলার বিষয়বস্তু শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি যাদবপুরের প্রশাসক নই। এই সব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকের কাছে যাওয়া উচিত।’
প্রসঙ্গত, যাদবপুর-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত আটচল্লিশ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে হামলার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। পড়ুয়াদের নামে চুরি, ছিনতাই,শ্লীলতাহানি, মারধর,আঘাতের জেরে গুরুতর জখম করার মতো একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। শনিবার মন্ত্রীর গাড়ির তলায় চলে আসা আহত পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়ের বিরুদ্ধেও তিনটি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা ছিল। অভিযোগ, ওইদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অশান্তি তৈরির চেষ্টা শুরু করে বাম ছাত্ররা। ছাত্র সংসদ নির্বাচন-সহ একাধিক দাবিতে সুর চড়াতে থাকে তারা।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছনোর আগে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে একদল বাম ছাত্র। চলে স্লোগানিং। পালটা তাতে বাধা দেয় টিএমসিপি। দু’পক্ষের হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তারই মাঝে শুরু হয় ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা। আচমকা সভাস্থলে পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীরা। তুমুল উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকা তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসেও ব্যাপক ভাঙচুর শুরু হয়। আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ব্রাত্য বসুর গাড়ির চাকার হাওয়াও খুলে দেওয়া হয়। ধাক্কাধাক্কিতে চোট পান খোদ শিক্ষামন্ত্রী। এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাও হয় তাঁর। বর্তমানে আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ শিক্ষামন্ত্রী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। সোমবার রাজ্যের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দেয় এসএফআই। তার জেরে কোচবিহার, শিলিগুড়ি, মেদিনীপুরে দফায় দফায় অশান্তির ছবি ধরা পড়েছে।