সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় উপাচার্য নিয়োগ মামলায় মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের মধ্যে বিরোধ মেটানোর জন্য রাজভবনে চায়ের আসরে সমস্যার সমাধানের জন্য পরামর্শ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের দায়ের করা মানহানির মামলাতেও একইভাবে চায়ের আসরে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজভবনের ভিতরে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পর তৃণমূল নেতাদের মন্তব্য নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দায়ের করা মামলায় দুপক্ষকেই সংযত হওয়ার পরামর্শ দিলেন বিচারপতি কৃষ্ণা রাও। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের দায়ের করা মামলায় বিচারপতির মন্তব্য, এই ধরণের বিবাদ জনসমক্ষে না আসাই ভালো। এগুলো চায়ে পে চর্চায় নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া উচিত।
গত বছর ২ মে রাজভবনের এক অস্থায়ী কর্মী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের ভিতরে নিজের চেম্বারে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলেন। সেই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তৃণমূলের বিভিন্ন নেতারা মন্তব্য করেন, মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এই মন্তব্যে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি কৃষ্ণা রাও বলেন, রাজ্য – রাজ্যপাল সংঘাত কারও জন্যই ভালো নয়। রাজ্য – রাজ্যপালের বিবাদ প্রকাশ্যে আসা উচিত নয়। এই সংঘাত চায়ে পে চর্চায় শেষ হতে পারে। একথা শুনে অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গোটা বিষয়টি মিটমাট করে নিতে রাজ্যপাল যদি চায়ের আসরে আমন্ত্রণ জানান তাতে আমাদের আপত্তি নেই। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৯ এপ্রিল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে তুমুল বিবাদে জড়ান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গত বছর ২ মে সন্ধ্যায় বিধানসভা ভোটের প্রচারে রাজভবনে আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে রাজভবনের ভিতরে পুলিশ ফাঁড়িতে এক রাজভবনেরই এক মহিলা অস্থায়ী কর্মী অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন।
এদিন আদালতে দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি কৃষ্ণা রাও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল দু’জনেই একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নিক।” এই মন্তব্যের পর মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমাদের কোনও আপত্তি নেই। একটা দিন ঠিক করে দিন আলোচনায় বসার জন্য।” তবে বিচারপতি এর উত্তরে প্রশ্ন তোলেন, “আপনি সময় চাইছেন। আপনি কি সিরিয়াস এই ব্যাপারটা নিয়ে? রাজ্যপালের কী দরকার মামলা করার?”

পালটা জবাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যপাল এমনিই রক্ষাকবচ পান। এই ধরনের রাজ্যপালের কথা ভাবতে পারলে সংবিধান রচয়িতারা এমন আইন বানাতেন না।” এরপর বিচারপতি ফের নির্দেশ দেন, “দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হল। ৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি। এটা মিটিয়ে ফেলা হোক।”
আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গোটা বিষয়টি মিটমাট করে নিতে রাজ্যপাল যদি চায়ের আসরে আমন্ত্রণ জানান তাতে আমাদের আপত্তি নেই।