সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
মঙ্গলবার নবান্নের সভাঘরে ষোড়শ অর্থ কমিশনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা হয় এদিনের বৈঠকে।
ষোড়শ অর্থ কমিশনের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে পৌরহিত্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের পক্ষ থেকে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। বিজেপির পক্ষ থেকে রয়েছেন শংকর ঘোষ ও দীপক বর্মন। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন শুভঙ্কর সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যের তরফে বৈঠকে রয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, অর্থসচিব প্রভাত মিশ্র-সহ অনেকেই।
‘রং ব্যবহার না করলে কেন্দ্র কেন টাকা দেবে না?’ প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। “কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে রাজ্যও ৪০ শতাংশ টাকা দেয়। তাহলে কেন্দ্রের নামে প্রকল্প না চললে কেন কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে? রাজ্য যখন টাকা দেয়, তখন রাজ্যেরও এক্তিয়ার রয়েছে।” ষোড়শ অর্থ কমিশনের সদস্যদের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর জোরালো সওয়াল। তাঁর ভাষায়, ” গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র কেন সরাসরি পঞ্চায়েতগুলিতে পাঠিয়ে দেবে? এই টাকা রাজ্যের মাধ্যমে দেওয়া উচিত।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের আয়তন, জনসংখ্যা, জনঘনত্ব, আর্থিক গতিবিধি, কর ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি খতিয়ে দেখে কমিশন। তার ভিত্তিতে রাজস্ব ঘাটতি অনুদান, পঞ্চায়েত-পুরসভার মতে স্থানীয় প্রশাসনে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সেইসঙ্গে গ্রামীণ পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, স্বচ্ছতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিপর্যয় মোকাবিলা, পরিকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বরাদ্দ দিয়ে থাকে। আবাস, একশো দিনের কাজের মতো প্রকল্পগুলিতে যখন কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে, তখন কমিশনের বরাদ্দ দেওয়ার আগে এই বৈঠককে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবারের ৩০ মিনিটের বৈঠকে রাজ্যের তরফে কী কী সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালনা করা হয়, তার বিস্তারিত তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। লক্ষীর ভাণ্ডার, খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে কী কী ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা রাজ্যে, তার বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন কোন প্রকল্পে কেন্দ্রর পক্ষ থেকে কত টাকা রাজ্য পায়, তার বিস্তারিত খতিয়ানও তুলে ধরা হয়।
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ” কেন্দ্রের থেকে টাকা বকেয়া, নাম না ব্যবহার করলে কেন্দ্র বলছে টাকা দেবে না, এটা কোন ধরনের দ্বিচারিতা?” ৪১ শতাংশ নয়, করের টাকা আধাআধি ভাগ চাই। মঙ্গলবার নবান্নে অর্থ কমিশনের বৈঠকে এমনই দাবি তুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে কেন্দ্রের করের অর্থের ৪১ শতাংশ পায় রাজ্য। এই হার বাড়িয়ে ৫০ শতাংশের দাবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থ কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বিরোধীরাও ৫০ শতাংশের দাবি তুলেছেন বলে খবর।
উল্লেখ্য, চলতি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ ২০২১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অরবিন্দ পানাগড়িয়ার নেতৃত্বে গঠিত হবেছে যোড়শ অর্থ কমিশন। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ শেষে ষোড়শ অর্থ কমিশন কার্যকর হবে। এই অর্থ কমিশনের আওতায় পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে।
এদিন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অর্থ কমিশনে প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, বেশিরভাগ রাজ্যই করের অর্থের ৫০ শতাংশ চেয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া এদিন কেন্দ্রের বকেয়া নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন প্রতিনিধিরা।