সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভুয়ো ভোটার ধরতে কমিটি গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে গঠন হয়েছে ওই ৩৬ জনের কমিটি। সেই কোর কমিটিতে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই কোর কমিটির প্রথম বৈঠক বসল তৃণমূল ভবনে।
রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হলো কোর কমিটির প্রথম বৈঠক। তবে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না কোর কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৫ মার্চ ভোটার কার্ড ইস্যুতে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক। ওই বৈঠকে কোর কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি দলের জেলা সভাপতি, বিধায়ক এবং নেতৃত্বকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলার ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে ভোটার’ শনাক্ত করার কাজ চলবে। ভোটার তালিকার বুথভিত্তিক এবং ঠিকানাভিত্তিক স্ক্রুটিনির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাঁর অভিযোগ, গুজরাত এবং হরিয়ানার ভোটার কার্ডের নম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় মিলছে। মমতার নির্দেশে আজ সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে তৃণমূল ভবনে ভুতুড়ে ভোটার চিহ্নিত করার জন্য প্রথম বৈঠকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জন্য বেঁধে দেওয়া হল একগুচ্ছ নির্দেশিকা।
ভোটার তালিকা থেকে ‘ভূত’ তাড়াতে আরও জোরদার দাওয়াই ঠিক করে ফেলল রাজ্যের শাসকদল। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে এই সংক্রান্ত বৈঠক থেকে পাঁচটি নয়া নীতি তৈরি করে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি কোর কমিটি। পাশাপাশি জেলায় জেলায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের চিহ্নিত করে আলাদা করতে প্রত্যেক জেলা আলাদা করে কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হল। তাতে কমপক্ষে ১১ জন প্রতিনিধি থাকছেন।
সূত্রের খবর, আগামী ১৫ তারিখ ফের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আলোচনার জন্য মমতার তৈরি কমিটিকে ভারচুয়াল বৈঠকে ডেকেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জেলা থেকে আসা রিপোর্টগুলি নিয়ে আলোচনা হবে, তারপর তা পেশ করা হবে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে এই বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনার পর জেলা সভাপতিদের জন্য পাঁচ দফা দাওয়াই বেঁধে দেওয়া হল। জানানো হয়েছে –
১) এ রাজ্যে ভোট দেওয়ার অধিকারী নন, এমন নামগুলিকে আলাদা করে নথিভুক্ত করতে হবে।
২) একই এপিক নম্বরে আলাদা আলাদা নাম থাকলে তা পৃথকভাবে নথিভুক্ত করতে হবে।
৩) ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার বিধানসভা ভিত্তিক প্রত্যেকটি বুথের প্রতিটি পার্টে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে স্ক্রুটিনি করতে হবে। একইসঙ্গে ভোটার তালিকার সত্যতা যাচাই করতে হবে।
৪) অন্যায় বা অযাচিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে যে সমস্ত নাম বাদ গিয়েছে, সেগুলিকে পুনরায় নথিভুক্ত করতে হবে।
৫) অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে যে সমস্ত ভোটারের নাম নথিভুক্ত হয়েছে, সেসব নামে বিশেষ নজরদারি করতে হবে।

কোর কমিটির সদস্যদের বেশ কয়েকটি জেলার দায়িত্ব বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন তৃণমূল নেতা মানস ভ্যুঁইয়াকে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মোসারফ হোসেন নিজের জেলা উত্তর দিনাজপুরের পাশাপাশি হাওড়া, হুগলি দেখবেন। এইভাবে তৃণমূল নেতাদের দায়িত্ব নিয়ে দেখতে হবে কোথায় রয়েছে ভুতুড়ে ভোটার।

প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে পদ্ম ফোটানোর পর বিজেপির টার্গেট বাংলা এবং বিহার। তবে বাংলাতে কেন্দ্রের শাসক দলকে রাজনৈতিভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর জানিয়েছেন, ওই দুই রাজ্যে ভুতুড়ে ভোটার দিয়ে জয়ী হয়েছে বিজেপি, এক ফন্দি বাংলায় খাটাতে দেবেন না তিনি।