সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় বামপন্থী ভাবধারার অন্যতম পীঠস্থান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবার এক ভিন্ন চিত্রের সাক্ষী থাকল। রাম নবমী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গেরুয়া পতাকা এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর দক্ষিণপন্থী ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাম পুজোর আয়োজন করে।
শনিবারই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাম-নবমী পালন করতে চেয়েছিল এবিভিপি। তবে তাতে অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই রাম-নবমী পালন ডানপন্থী পড়ুয়াদের। উড়ল ‘জয় শ্রীরামের’ পতাকা। বাম-অতিবামদের ‘ঘাঁটি’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেরুয়া পতাকা! নিতান্তই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ভবনে পড়ুয়াদের একাংশ রাম পুজো করছেন বলে অভিযোগ। স্রেফ তাই নয়, জাতীয় পতাকা দিয়ে যাদবপুরের দেওয়ালে ‘আজাদ কাশ্মীর’ স্লোগানও ঢাকা হল রামনবমীর দিনেই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে রাম-পুজো করছে ডানপন্থী পড়ুয়ারা। শনিবারই ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকেছে রামের মূর্তি। প্যান্ডেল করে পুজোর সব তোড়জোড় শুরু করেছে ডানপন্থী পড়ুয়ারা। যাদবপুরের ছাত্র নেতা বলেন, “একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অল্প কিছু নকশাল রয়েছে। তারা বাদ দিয়ে আমরা সকলেই আজ এখানে রাম পুজো করছি।” তবে যাবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ গতকাল বলেছিল, এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও কর্তৃপক্ষ নেই। যে অস্থায়ী উপাচার্য ছিলেন, তাঁকেও আচার্য সিভি আনন্দ বোস সরিয়ে দিয়েছেন। ফলত, উপাচার্য না থাকার জন্য এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠান পালন করা যাবে না। এই মর্মে একটি রেজুলিউশনও পাস করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে সহ উপাচার্য, ডিন-দের সই রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
যদিও, কলকাতা জেলা সম্পাদক দেবাঞ্জন পাল বলেছিলেন,”আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ছোট করে আরাধ্য দেবতা শ্রী রামচন্দ্রের একটা আরাধনা করব। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তো আর পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নয়! এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ইফতার হতে পারে, যদি সরস্বতী পুজোর মতো বিভিন্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের একপেশে সিদ্ধান্ত আমরা অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম।” অনুমতি না পেলেও অবস্থানে অনড় থাকেন পড়ুয়াদের একাংশ। রবিবার সবুজ রঙের রাম প্রভুর প্রতিমা এনে পুজো করেন ছাত্রদের একাংশ। এই প্রথমবার যাদবপুরের ক্যাম্পাসে রামনবমী পালন করলেন পড়ুয়ারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ঘটনা রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যাদবপুর বরাবরই বাম ও অতিবাম ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সেই প্রেক্ষাপটে গেরুয়া পতাকা এবং রাম নবমীর পুজোকে অনেকেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।