সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
২৭ বছর পর সিপিআইএমের পার্টি কংগ্রেসে হল ভোটাভুটি। শেষবার হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তাও আবার কলকাতা। তারপর হল এই বছর। ভোটাভুটির উপলক্ষ কী? সীতারামের উত্তরসূরি খোঁজা। ২৪ তম পার্টি কংগ্রেসে এই উত্তরসূরি খুঁজতে গিয়েই রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য়দের।
অবশেষে, অনেক ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তুলে আনা হয়েছে মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবিকে।
তিনি পলিটব্যুরো সদস্যদের মধ্য়ে সবচেয়ে বর্ষীয়ান। আবার সংখ্য়ালঘু মুখ। সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে বেবির পায়ের ছাপ থাকলেও জানা গিয়েছে, একই ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য সদস্যদের নজরে ছিলেন মহম্মদ সেলিমও। বেবির পরিবর্তে তাঁকে অনেকেই চেয়েছিলেন সীতারামের উত্তরসূরি রূপে। সূত্রে খবর, অন্য সদস্যরা চাইলেও, নিজেকে কেন্দ্রীয় মঞ্চে আপাতত ‘চাননি’ সেলিম। তাই পদপ্রার্থীর লাইন থেকেই সরেই আসেন তিনি। ফিরিয়ে দেন প্রস্তাব।
বাংলায় ধুঁকছে বামেরা। সংগঠনে বাড়ছে দুর্বলতা। এমতাবস্থায়, নতুন ভূমিকায় সেলিম গেলে কিছু বাড়তি ‘অক্সিজেন’ পেত রাজ্য বাম, মত ওয়াকিবহাল মহলের। কিন্তু সেই প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দিয়েছেন সেলিম। যেমন ভাবে সেন্ট্রাল কমিটির সিদ্ধান্তে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রীত্ব পদের প্রস্তাব। ইতিহাস মনে করিয়ে কার্যত একই রকম কাণ্ড ঘটালেন সেলিমও। ফলত বামেদের ভরকেন্দ্র আবারও ঝুঁকে গেল দক্ষিণের দিকে।
বঙ্গের নতুন পাঁচ মুখ। বাংলা থেকে পাঁচ নতুন মুখ সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। পলিটব্যুরোতে জায়গা পেলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। এতদিন পলিটব্যুরো ছিলেন মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম আর সূর্যকান্ত মিশ্র। সেলিম, রামচন্দ্র ডোম থাকলেন। বয়সের নিয়মে বাদ গেলেন সূর্যকান্ত। এলেন শ্রীদীপ।
বাংলার সদস্যরা ছাড়াও বয়সের কারণে পলিটব্যুরো থেকে বাদ পড়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তাঁর জায়গায় এলেন ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকায় রয়েছেন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বোস, সমন পাঠক, দেবব্রত ঘোষ ও সৈয়দ হোসেন। সমন, দেবব্রত ও সৈয়দ এখন দার্জিলিং, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক। সিপিআইএমের নিয়মে, এক সঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। ফলে, এই তিন জনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ অনুমতি নেওয়া না কি জেলা সম্পাদক পদে বদল আনা হবে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সিপিআইএমের অন্দরে। কারণ ওই তিন জেলা সম্পাদক রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলেন।

অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে প্রজন্ম বদল হল পলিটব্যুরোতে। বাতিল খাতা দেখলেই বিষয়টা খানিক স্পষ্ট হবে। বাদ পড়লেন প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, সুহাসিনী আলি, জি রামকৃষ্ণন, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র। সকলেই ৭৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো থেকে বাদ গেলেন। ব্যতিক্রমী হলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর বয়স হলেও ব্যতিক্রমী হিসাবে রেখে দেওয়া হল।