সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“আমি ওসব ব্যাক-প্যাক-ফ্যাক বুঝি না, কেউ কাউকে কোনও ইনফরমেশন দেবেন না।” সরাসরি আইপ্যাক এর নাম উচ্চারণ না করলেও এভাবেই তৃণমূলের সমস্ত বিধায়কদের সঙ্গে পরিষদীয় বৈঠকে মমতা কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। ব্যাক-প্যাক-ফ্যাক বলতে মুখ্যমন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন, তাহলে কি আইপ্যাকের কথা বললেন? এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে দলের বিধায়কদের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, আজ মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় ছিলেন। ওয়াকফ বোর্ড এবং বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তার পরেই বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মমতা। সেখানে একাধিক সিদ্ধান্তও হয়। এর পাশাপাশি পরিষদীয় দলের বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে দলের বিধায়কদের আরও একগুচ্ছ নির্দেশও দেন তিনি।
অভিষেকপন্থী নাকি মমতাপন্থী? গত কয়েক মাস ধরেই তৃণমূলের অন্দরে এই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছিল। যে দলটা তৈরির পেছনে সবথেকে যার অবদান বেশি তিনি আর কেউ নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে দেখা যাচ্ছিল একাধিক ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন দলের অন্দরে রদবদল হতে পারে। এমনকী প্রবীণদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছিলেন তিনি। উসকে উঠছিল নবীন-প্রবীন দ্বন্দ্ব। তবে এবার মমতা কার্যত জানিয়ে দিলেন তিনিই দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
এবার সূত্রের খবর, বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে মমতা কার্যত বলেই দিয়েছেন দল দেখবেন তিনিই। অর্থাৎ যাবতীয় জল্পনায় কার্যত জল ঢেলে দিলেন মমতা।
বিধানসভায় দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা। সেখানে তিনি জানিয়ে দেন, দল আমি আর বক্সীদাই দেখব। এমনকী দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনও নেত্রী নিজে হাতে সাজাবেন বলে জানিয়েছেন। কার্যত দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও ভোট এলে দলের নেতারা বলে ওঠেন সব কেন্দ্রে মমতাই প্রার্থী। বিরোধীরা ঠাট্টা করে বলেন, দলের ভেতর একটাই পোস্ট বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট। তবে এবার মমতা কার্যত আক্ষরিক অর্থেই জানিয়ে দিলেন দলের অন্দরে প্রথম ও শেষ কথা তিনিই বলবেন। আর সঙ্গে থাকবেন সুব্রত বক্সী।
মমতার রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘদিনের সঙ্গী সুব্রত বক্সী। দলের একেবারে বুথ স্তরের কর্মী থেকে দলের সাংসদ সর্বত্র তাঁর গতিবিধি। জেলাস্তরে দলের একাধিক বৈঠকে তিনিই একমাত্র অধিকারী দলের নেতাদের অবস্থান ঠিক করার। সেই প্রবীণ নেতাকে ফের বিরাট স্বীকৃতি দিলেন মমতা। সেই সঙ্গেই দলের অন্দরে প্রবীণদের কোণঠাসা করার যে প্রবনতা শুরু হয়েছিল তাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করলেন নেত্রী।
একসময় দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন মুকুল রায়। বছর কয়েক আগে সেই পদ পান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে দলের ‘দ্বিতীয় ব্যক্তি’ হিসেবে সামলাচ্ছিলেন অভিষেক। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দলে গুরুত্ব বাড়ে পুরনো নেতাদের। আর কালীঘাটে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও দেখা যায়, পুরনো নেতাদেরই দলে দায়িত্ব বাড়ছে। এমনকী দলেরই নেতারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, অভিষেককে দলে কোণঠাসা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী হলেই মাতব্বর নয়। জানালেন মমতা। সেই সঙ্গেই ছাত্র যুব সংগঠনের ভূমিকায় তিনি সন্তুষ্ট নন। পাশাপাশি ব্লকস্তরের সংগঠনের উপরেও তিনি এবার নজর রাখবেন বলে খবর।