সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
প্রয়াত হলেন নদিয়ার তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে নদীয়ার জেলা রাজনীতি তো বটেই, রাজ্য রাজনীতিতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাপস সাহার। বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। ব্রেন স্ট্রোকের কারণেই মৃত্যু বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বিধায়কের মৃত্যুতে নদিয়া-সহ বাংলার রাজনীতিতে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়।
এদিন এক্স হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “নদীয়ার তেহট্টের বিধায়ক, আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, শ্রী তাপস সাহা’র অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি আমার অনেক দিনের পুরাতন সহকর্মী ছিলেন। তাঁর এই মৃত্যু জেলা তথা বাংলার রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তাঁর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও অগণিত সমর্থককে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।”
অন্যদিকে প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার মরদেহ আজ রাজ্য বিধানসভায় নিয়ে আসা হলে সেখানে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাপস সাহা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও তার রাজনৈতিক জীবন সবসময় মসৃণ ছিল না। ২০১১ সালে তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট কেটে নেওয়ায় তৃণমূল প্রার্থী পরাজিত হন এবং ওই আসনে জয়ী হন বামপ্রার্থী। দলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করা হলেও পরে তিনি আবার দলীয় কর্মকাণ্ডে ফিরে আসেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নদীয়ারই পলাশিপাড়া আসন থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল তাকে আবার তেহট্ট থেকে প্রার্থী করে এবং তিনি জয়লাভ করে বিধায়ক নির্বাচিত হন।

তবে গত বছর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল যে, চাকরি দেওয়ার নামে তিনি কয়েক কোটি টাকা তুলেছিলেন। এই সংক্রান্ত তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাঁর কণ্ঠস্বর সংগ্রহ করেছে বলেও জানা গিয়েছিল। তাপস সাহার বিধানসভা কেন্দ্র তেহট্ট কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই লোকসভা কেন্দ্রেরই আওতাধীন আরেক বিধানসভা এলাকা কালীগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছিলেন।

ফলে তাপস সাহার মৃত্যুতে কালীগঞ্জ এবং তেহট্ট- এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্রেই উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই জোড়া শূন্যপদে উপনির্বাচন রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কতটা প্রভাব ফেলে, তা দেখার বিষয়।