সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বীরভূমে কোর কমিটির বৈঠক চলাকালীন অনুব্রত মণ্ডলকে ফোন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ফোনেই বৈঠক নিয়ে খোঁজ-খবর নেন তৃণমূল সুপ্রিমো। প্রসঙ্গত, আর জেলা সভাপতির পদে নেই অনুব্রত। শুধু তাই নয়, বীরভূম থেকে জেলা সভাপতির পদটাই তুলে দেওয়া হয়েছে দলের তরফে।
এদিকে বিগত কয়েক মাসে লাগাতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে বীরভূম থেকে। কোর কমিটির বৈঠক না হওয়া নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে কাজল শেখকে। তারপরেই আজ রবিবার বসে কোর কমিটির বৈঠক। এই বৈঠক চলাকালীনই অনুব্রত মণ্ডলকে ফোন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতিকে বলেন, “কোনওরকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, ছাব্বিশের নির্বাচনে একজোট হয়ে ঝাঁপাতে হবে।”
একইসঙ্গে মমতা অনুব্রত মণ্ডলকে দলে জেলার সকল নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন বলেও খবর সূত্রের। দলনেত্রী ফোনেই অনুব্রতকে নির্দেশ দেন, “কেষ্ট, কাউকে কিন্তু বাদ দেওয়া যাবে না। কাজলকেও কনফিডেন্সে নিতে হবে। আশিসদা আর শতাব্দীকেও মাঝে মাঝে ডেকে নেবে।” প্রসঙ্গত, আগে কোর কমিটির সদস্যসংখ্যা সাত হলেও শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে জেলায় দলের দুই সাংসদকেও এই কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, বৈঠকের বিষয়ে কিছুটা মনিটরিং করেন মমতা।
অন্যদিকে সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলকে মিটিং ডাকার বিষয়ে নির্দেশ দেন। জবাবে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, দিদি আমি কেন মিটিং ডাকব। মিটিং ডাকার যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে আশিস দা। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান বিকাশ।
বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে দু’টি শিবির রয়েছে বলে দাবি করা হয়। সেই হিসাবে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখকে পরস্পরের বিরোধী হিসাবে দাবি করা হয়। একটা সময় এই জেলায় অনুব্রতই ছিলেন শেষ কথা। কিন্তু, তাঁর জেলযাত্রার পর কাজল শেখের প্রভাব বাড়ে। অনুব্রত জেল থেকে ফেরার পর দুই শিবিরের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব বারবার নানা ঘটনায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কিন্তু, ছাব্বিশের ভোটের আগে এই ধরনের কোনও বিবাদ চাইছে না শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিন বৈঠক নিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “পদের মায়া আমি করি না। পদ না পেলে আমার অম্বল হয়ে যাবে এমনটা নয়। চাইলে আমি আগেই এমএলএ এমপি হয়ে যেতে পারতাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে নিজে রাজ্যসভার এমপি হতে বলেছিলেন। আমি হয়নি। জেল যখন খেটেছি তখন অন্য দলে যাব না। অন্য দলে গেলে তো আর জেল খাটতে হত না।”

কোর কমিটির বৈঠক শেষে কাজল শেখ বলেন, “বৈঠক একশো শতাংশ সফল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। বীরভূম জেলা চালাবে কোর কমিটিই। বিষয়টিতে সিলমোহর দিয়েছেন দলনেত্রী। বিগত দিনে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেখা যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কাজ করব। নেতা হবার লোভ আমার নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশ দেবেন তা পালান করাই আমার কাজ।”
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খুব সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে। দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলছে ও চলবে। দলের সবাই তাদের মতামত রেখেছেন। সবাই এক সুরেই কথা বলেছেন।”