সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“শিয়ালদা কোর্টের বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা পডে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রিত্বের অধিকার হারিয়েছেন। রায়ের কপিটা অবিলম্বে ওঁর পড়ে, বুঝে, গোটা ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত ওঁর।” এভাবেই এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে সিপিএমের সুরে সুর মেলালেন আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্যাতিতার পরিবার।
আর জি কর কাণ্ডে সঞ্জয় রাইকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে শিয়ালদা কোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানিয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছে দুই পক্ষই। সোমবার সেই শুনানির আগে এবারে গোটা ঘটনার জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করলেন নির্যাতিতার পরিবার। আর তার জেরে এবারে সরাসরি রাজনৈতিকভাবেও যেন তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমে পড়লেন তারা। কারণ আরজিকরের ঘটনার পর থেকে রাত দখল হোক অথবা সিপিএম ও নকশালদের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে নবান্ন দখলের যে দাবী উঠেছিল আলিমুদ্দিন থেকে কার্য তো সেই এক স্লোগান তুললেন তারাও। তার প্রেক্ষিতেই নির্যাতিতার মা-বাবার আচরণ নিয়ে একদিকে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। আবার পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানালেন নির্যাতিতার মা-বাবাও।
নির্যাতিতার বাবা বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যিনি তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পুলিশমন্ত্রীও। তাই এখনও একই কথা বলব। আমরা কোনও চক্রান্তের ফাঁদে পা দিইনি। শিয়ালদা কোর্টের বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা পডে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রিত্বের অধিকার হারিয়েছেন। রায়ের কপিটা অবিলম্বে ওঁর পড়ে, বুঝে, গোটা ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত ওঁর।” নির্যাতিতার মা বলেন, “আমাদের প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী সবসময় বলেন, ‘আমার কথাতেই সব হয়’। তার মানে ওঁর কথাতেই সব হয়েছে। বিরোধীদের ফাঁদে পা দেওয়ার কথাই ওঠে না। আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি। মেয়ের বিচার পাওয়ার আশায় আমাদের বেঁচে থাকা।” তদন্ত নিয়েও ফের অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “আমি বলব সঞ্জয় অবশ্যই অপরাধী। কিন্তু আমাদের মেয়ের মামলাটি যে বিরলের মধ্যে বিরলতম, তা সিবিআই সেভাবে প্রমাণ করতে পারেনি, পুলিশও পারেনি। আমাদের মেয়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীরা সকলে বেরিয়ে আসুক। আমরা সবার ফাঁসি চাই। একা সঞ্জয়ের ফাঁসি চাই না।”
প্রসঙ্গত শুক্রবারেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছিলেন আর জি করের নির্যাতিতার মা-বাবা। সেই নিয়ে শনিবার তাঁদের নিশানা করেন কুণাল। সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “কেন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন ওঁরা? মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ তো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীকে ধরেছে! তাঁরা কিছু অন্ধ, তৃণমূল বিরোধী, বাম-অতিবাম এবং চক্রান্তকারীর কথায় বিভ্রান্ত হয়ে সমানে অবস্থান বদলে চলেছেন। আমরা বিস্মিত, মেয়ের মৃত্যুতে যে বাবা-মার বুক ভেঙে গিয়েছে, সেই দিন থেকে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে রোজ স্নায়ু ধরে রেখে এক-একদিন এক-এক রকম বিবৃতি দিয়ে যাওয়া কী করে হতে পারে! আমরা কান্নার ছবি দেখতে পেলাম না, বুকফাটা আর্তনাদের যে ছবি দেখে থাকি… প্রথম দিন থেকে ইস্পাত কঠিন ভাবে এঁরা সাংবাদিকদের নানা কথা বলে গেলেন। কেউ কানে মন্ত্র দিচ্ছে। যারা চক্রান্তকারী, তাদের মুখপাত্র হয়ে গিয়েছেন এই অভয়ার মা-বাবা। পূর্ণ সম্মান দিয়েই বলছি।”