শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
শর্ত সাপেক্ষে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ আরও ২ জনকে নেতাকে মহেশতলা যাওয়ার অনুমতি আদালতের। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মহেশতলায় অশান্তির পর এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে পুলিশের তরফে বাধা পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালতের শুনানিতে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারের যুক্তি খণ্ডন করে শুভেন্দুকে মহেশতলায় যাওয়ার অনুমতি দিলেন।
সোমবার এই মামলার শুনানিতে শুভেন্দুর আইনজীবী সূর্যনীল দাস আদালতে জানান, এসপি-র কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনগর থানাকেও জানানো হয়েছে। ওই এলাকায় ভারতীয় সংহিতায় ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ওই এলাকায় ১৬৩ ধারা (পূর্বতন ১৪৪ ধারা) জারি থাকবে বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দুর আইনজীবী।
শুভেন্দুর আইনজীবীর কাছ থেকে এই তথ্য জানার পরই বিচারপতি রাজ্যকে প্রশ্ন করেন, “আজ যদি উঠে যায় তাহলে কীসের অসুবিধা? যদি আদালত অনুমতি দেয়, তাহলে কী আশঙ্কা করছেন?”
রাজ্যের তরফে এজি বলেন, “যেখানেই কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটে, বিরোধী দলনেতা কেন সেখানে যেতে চান? উনি আদালতে এলেন কেন? নিজেই চলে যেতে পারতেন।” বিচারপতির উদ্দেশে এজি বলেন, “আদালতকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহৃত হতে দেবেন না।” রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আসলে পাবলিসিটি পেতে চান বিরোধী দলনেতা।”
তখন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “বিরোধী দলনেতাকে যদি আটকে দেন, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?” বিচারপতি নির্দেশ দেন, মঙ্গলবার মহেশতলায় যাবেন শুভেন্দু। তবে কোনও র্যালি নয়। সঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যও করা যাবে না।
এ নিয়ে বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীদের প্রশ্ন করেন, যদি আদালত অনুমতি দেয়, তাহলে কীসের ভয়? পালটা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, যেখানে গোলমাল হয়েছে, বিরোধী দলনেতা সেখানে কেন যেতে চাইছেন? তিনি চাইলে নিজেই চলে যেতে পারতেন, আদালতের অনুমতির কী দরকার ছিল? অন্যদিকে, আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও শেষপর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে শুভেন্দুকে সফরের অনুমতি দেয় হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন মহেশতলার রবীন্দ্রনগর এলাকায় একটি ফলের দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে বচসা শুরু হয়, যা দ্রুত দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে পরিণত হয়। ব্যাপক ভাঙচুর, ছাদ থেকে ইটবৃষ্টি, বাইকে আগুন লাগানো, পুলিশের গাড়িতে হামলা সবমিলিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।ঘটনাস্থলে পৌঁছান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ), ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি)-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র্যাফ, ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস, করা হয় লাঠিচার্জ। ঘটনায় একাধিক পুলিশকর্মী আহত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকার বাড়িঘর ও দোকানপাটও। এই পটভূমিতেই শুভেন্দু অধিকারীর সফর ঘিরে প্রশাসন ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। অবশেষে, আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার তিনি মহেশতলায় যেতে পারবেন।