সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন
রাধিকা যাদব – যিনি হতে চেয়েছিলেন ভারতের পরবর্তী সানিয়া মির্জা। বয়স মাত্র ২০।
ইতিমধ্যে বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিং-এ ১১৩ নম্বরে উঠে এসেছিলেন। তার জীবনটাই ছিল কোর্টে ছন্দের মতো। কিন্তু সেই কোর্টেই থেমে গেল স্বপ্ন।
নিজের বাবার গুলিতে প্রাণ হারালেন রাধিকা।
রাধিকার উত্থান
ছোটবেলা থেকেই টেনিসের প্রতি ছিল রাধিকাকে প্রবল আকর্ষণ। মধ্যপ্রদেশের এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে র্যাঙ্কিং-এর শীর্ষে পৌঁছনোর জন্য রাধিকা দিনরাত এক করে দেন অনুশীলনে। তাঁর খেলা দেখে অনেক কোচ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন – “ওর মধ্যে পরবর্তী সানিয়া লুকিয়ে আছে।”
বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে রাধিকা নিজের জায়গা পাকা করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে চলছিল উত্তাল ঝড়। পারিবারিক সমস্যায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
পুলিসের বক্তব্য:
পুলিস জানিয়েছে যে তারা একটি ফোন পেয়েছিল, যে গুলিবিদ্ধ এক মহিলাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এরপর পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় যে সে একজন টেনিস খেলোয়াড়, সঙ্গে একটি একাডেমি চালাত।
মৃতের বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তের সময় সে তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। পুলিস জানিয়েছে যে অভিযুক্তের ভাই অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং জানা গেছে যে দীপক, তার মেয়ে টেনিস একাডেমি চালানোয় জন্য বিরক্ত ছিলেন। একেবারেই পছন্দ করত না এইসব।
মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ:
সংবাদমাধ্যম সূত্রে বলা হয়েছে যে, তাঁর বাবা রাধিকার ইনস্টাগ্রাম রিল তৈরির প্রতি তাঁর আসক্তি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন।
রাধিকার পরিচিতি:
রাধিকা জাতীয় স্তরের টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (ITF)র্যাঙ্কিং ছিল ডাবলস টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ১১৩। একটি স্পোর্টস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, রাধিকা যাদবের জন্ম ২০০০ সালের ২৩শে মার্চ এবং তিনি ITF ডাবলসে শীর্ষ ২০০ জনের মধ্যে ছিলেন।
তিনি বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার মধ্যে বিশ্বনাথ হারশিনি, বুগ্রাট মেলিস, সান ইফান, মারুরি সুহিথা এবং মাশাবায়েভা দিলনাজের বিরুদ্ধে ম্যাচও ছিল।
২৫ বছর বয়সী এই তরুণীকে সকাল ১০টায় গুরুগ্রামের সেক্টর-৫৭-এ তার বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
পুলিস তার বাবার ব্যবহৃত বন্দুকটি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাধিকার বাবা তার রিল বানানোর আগ্রহ নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং আশঙ্কা করতেন যে এটি পরিবারের জন্য লজ্জা বয়ে আনছে। সেক্টর ৫৬ থানার স্টেশন হাউস অফিসার ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছেন, “আমরা হাসপাতাল থেকে খবর পেয়েছি যে, ২৫ বছর বয়সী এক মহিলা মারা গেছেন। তার শরীরে তিনটি বুলেটের আঘাত ছিল।” তিনি আরও জানান, “আমরা মহিলার চাচার সাথে দেখা করেছি কিন্তু তিনি কিছু বলেননি। পরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি যে, মহিলার বাবা তাকে গুলি করেছেন।”

রাধিকা রাজ্য স্তরের টেনিস মহলে একটি পরিচিত নাম ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি পদক জিতেছিলেন। তিনি একটি লন টেনিস একাডেমিও চালাতেন যেখানে তিনি তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতেন। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গুলি চালানোর জন্য ব্যবহৃত রিভলভারটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য বর্তমানে তদন্তাধীন।