সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
কলকাতায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিগ্রহের ঘটনা। এবার জোকা। নামী ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। গ্রেফতার কলেজের ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া।
মধ্যরাতেই খবর পেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছল পুলিশ। জোকার যে কলেজে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ভর্তি হতে গেলে সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পড়ুয়ারা এই কলেজে পড়াশোনা করেন। এই কলেজে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তার একাধিক ধাপ পার করতে হয়। তারপরও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল! হতবাক কলেজ কর্তৃপক্ষ।
দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইএম কলকাতা, যা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়, সেই প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান এতদিন শিক্ষার মানের জন্য পরিচিত ছিল, এখন সেখানে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
তরুণী ওই কলেজের ছাত্রী নন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রেজিস্টারে স্বাক্ষর না করেই কীভাবে ওই তরুণী ভিতরে গেলেন, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
পুলিশ সূত্রে খবর, হরিদেবপুর থানার পুলিশ অভিযুক্ত ছাত্রকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। অভিযোগকারিণীর দাবি, “কাউন্সেলিং সেশনের” নামে ডেকে তাঁকে বয়েজ হস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। খাবারে মাদক মেশানো ছিল বলে সন্দেহ, যার ফলে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। সেই অবস্থাতেই তাঁর উপর চলে শারীরিক নির্যাতন। অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার প্রাথমিক বয়ান অনুসারে, যখন তাঁর জ্ঞান ফেরে, তখন তিনি নিজেকে হস্টেলের ঘরে পড়ে থাকতে দেখেন।

পুলিশ ইতিমধ্যেই ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ, ভিজিটরস লগ ও খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেছে। ঘটনার তদন্তে যৌথভাবে কাজ করছে হরিদেবপুর ও ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ। ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ছাত্রের নাম অবশ্য গোপন রেখেছেন তদন্তকারীরা। তবে গোটা ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। পুলিশকে নির্যাতিতা ছাত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে বয়েজ হস্টেলের রেজিস্টারে সই করতে দেওয়া হয়নি। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বয়েজ হস্টেলের রেজিস্টারে সই না করিয়েই কীভাবে এক ছাত্রীকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হল। বিষয়টি কি নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল, নাকি তাঁরা সব জানতেন? গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা।
এর মধ্যেই চাঞ্চল্যকর দাবি করে বসলেন তরুণীর বাবা। এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৯:৩৪ মিনিট নাগাদ তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। তিনি জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে অটো থেকে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পারি এসএসকেএম নিউরোলজিস্ট ডিপার্টমেন্টে আমার মেয়ে ভর্তি রয়েছে। পরবর্তীকালে জানতে পারি যে হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। মেয়ে আমাকে জানিয়েছে, ওর সঙ্গে ধর্ষণের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি’।
জানা গিয়েছে, ওই তরুণী বাড়িতে ফেরার পর তাঁর বাবাকে জানান, তাঁর সঙ্গে কোনও যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেনি। তরুণীর বাবা আরও জানিয়েছেন, যাকে গ্রেপ্তার হয়েছে তার সঙ্গে মেয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তিনি আরও দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ে ঘুমিয়ে থাকার কারণে তাঁর সঙ্গে এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার করে কথা বলতে পারেননি তিনি। হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁর মেয়েকে কোথা থেকে পেয়েছেন সেটাও তাঁকে জানানো হয়নি। এমনকি, থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাও তাঁর মেয়ে করেনি। জোকার ঘটনায় যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় তার মধ্যে তরুণীর বাবার এমন বিস্ফোরক দাবিতে ঘুরে গিয়েছে ঘটনার মোড়।