সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
ডেস্টিনেশন বেঙ্গল। গত কয়েক বছরের ভারতবর্ষের অন্যান্য যে কোন রাজ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নিজেদের বিনিয়োগবান্ধব ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে বাংলা।
তবে তার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরতে ছুটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনো লন্ডন আবার কখনো স্পেন-এর মতো বিভিন্ন দেশে ছুটে গিয়ে মমতার বাংলায় শিল্প আনার মরিয়া চেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে কয়েকদিন আগেই কলকাতায় ভারত মার্কিন যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানের সেমিকন্ডাক্টর প্লান্ট তৈরির ঘোষণা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি।
এবারে বাংলায় বড় মাপের বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এলো ব্রিটেন।
পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডঃ অ্যান্ড্রু আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর উপস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হল ঐতিহাসিক মৌ চুক্তি।
খড়্গপুরে মমতার সরকারের তৈরি করা বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বোতল থেকে বোতল ফুড-গ্রেড রিসাইক্লিং প্লান্ট তৈরি করতে ২০৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করল ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট।
খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এই অত্যাধুনিক রিসাইকিলিং প্লান্টে ম্যাগপেট পলিমার্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ব্রিটেন।
বাংলায় বিপুল অংকের এই বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য সচিব ডঃ রাজেশ কুমার, ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টের ইনভেস্টমেন্ট ডিরেক্টর নিখিল চুলানি, ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টের ইন্টারিম হেড অফ ইন্ডিয়া অরুন কোরাতি, ম্যাগপেট পলিমার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবেন্দ্র সুরানা।
প্রসঙ্গত, জল বা কোল্ড্রিংসের যে পেট বোতল বিক্রি হয় সেগুলিকে পুনর্ব ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য গোটা পৃথিবীতে অগ্রগণ্য সংস্থা ম্যাগপেট পলিমার্স প্রাইভেট লিমিটেড (ম্যাগপেট)। ভারতবর্ষে এই ধরনের পেট বোতল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কারখানা আগে কখনো তৈরি হয়নি। ব্রিটিশ সরকারের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের আগ্রহে বাংলায় এই প্রকল্পে ২০৫ কোটি টাকা বা ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট।
পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডঃ অ্যান্ড্রু আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বলেন, “বাংলায় বর্তমান সরকারের আমলে যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার ফলে ব্রিটেন সরকার এখানে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রস্তাবিত প্লান্টটির বার্ষিক ক্ষমতা হবে ৪৫,০০০ মেট্রিক টন। ব্রিটেন এবং ভারত যখন ব্যবসা, প্রযুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত করছে, তখন আজকের এই অংশীদারিত্ব আমাদের সহযোগিতার শক্তি দেখাচ্ছে। একসঙ্গে আমরা এমন একটি ভিত্তি তৈরি করছি, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে দীর্ঘস্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সবার জন্য উপকারী।
ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট এবং ম্যাগপেট পলিমার্স শুধু ভারতের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনবে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী জীবিকা তৈরি ও জলবায়ু পরিবর্তনে উদ্ভাবনের একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডও স্থাপন করবে।”