সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
যত্র তত্র পান-গুটখার থুতু ফেলা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার ছিল মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেখানেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। যেখানে সেখানে গুটখা, পানের পিক ফেলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার রাস্তাঘাট বা নতুন কোনও প্রকল্পে নীল-সাদা রঙ করে। শহরের সৌন্দর্যায়নে জোর দেয়। অথচ সেই সৌন্দর্যায়নে জল ঢেলে দেয় শহরবাসীর একাংশ। গুটখা, পানের পিকে ভরিয়ে দেয় সেই সমস্ত সৌন্দর্যায়ন। এবার তা রুখতে নয়া বিল আনছে রাজ্য সরকার। জানা গিয়েছে, এই নিয়ে বিধানসভায় নতুন বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। সেখানে যত্রতত্র পান-গুটখার পিক, থুতু ফেলার শাস্তিস্বরূপ মোটা জরিমানা কার্যকর করতে চলেছে। সেই বিল পেশের ব্যাপারে এদিনের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন নেওয়া হয়। অনুমোদনও মেলে। এবার বিধানসভায় সেই বিল পেশ হওয়ার অপেক্ষা। সূত্রের দাবি, বিল কার্যকর হলে যেখানে-সেখানে পিক ফেললে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে।
কলকাতা পুলিশ ঢেলে সাজাতে নতুন ৫ ডিসি পদ
কলকাতা পুলিশকে ঢেলে সাজাতে ঐতিহাসিক প্রস্তাব পাস হল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রস্তাবে অনুমোদন দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। স্বরাষ্ট্র তথা পুলিশ দফতর মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে রয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমারের পরামর্শেই এই সংস্কারের পথে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, সেই প্রস্তাব মতো এবার কলকাতা পুলিশে নতুন ১২টি ডেপুটি কমিশনার পদ তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচ জনের কাজই হবে তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া।
আরজি কর পরবর্তী অধ্যায়ে এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত আরজি করের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ডিজি রাজীব কুমার পুলিশি ব্যবস্থায় কিছুটা সংস্কার এনেছেন। যেমন, কোনও বড় অপরাধের ঘটনা ঘটে গেলে, দ্রুত তদন্ত করা। এফআইআর লেখা থেকে ময়নাতদন্তে প্রক্রিয়াগত কোনও ত্রুটি না রাখা। যাতে পরে আদালতে গিয়ে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়। এবং তিন, আইনের ধারা মেনে নির্ভুল ভাবে চার্জশিট তৈরি করা। বস্তুত তাঁর পরামর্শেই সম্প্রতি সরকার প্রতিটি জেলায় পুলিশকে সাহায্য করার জন্য আইনি উপদেষ্টা নিয়োগ করেছে। এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন যে ১২ জন ডেপুটি কমিশনার হবে তাঁরা সবাই নন আইপিএস ক্যাডার অফিসার। কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদ থেকে তাঁরা পদোন্নতির মাধ্যমে উঠে আসবেন। বর্তমানে যে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদ রয়েছে তাকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হবে।
বর্ডার আউট পোস্টের জন্য বিএসএফকে জমি
ইতিমধ্যেই বর্ডার আউট পোস্টের জন্য বিএসএফকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। নদিয়ার করিমপুরে ০.৯ একর জমি দেওয়া হচ্ছে বিএসএফকে। পাশাপাশি, সীমান্ত সুরক্ষায় আরও দুই জেলায় নির্দিষ্ট জায়গায় বিএসএফকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। জলপাইগুড়ি এবং মালদায় জমি দেওয়া হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
এই জলপাইগুড়ি এবং মালদা জেলা উত্তরবঙ্গের মধ্যে পড়ে। আর এই দুই জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। শুধু তাই নয়, এই দুই জায়গা দিয়ে জঙ্গিরা ঢুকে এপার বাংলায় নাশকতার ছক করছে। তাই বিএসএফকে এই দুই জেলায় জমি দিয়ে সীমান্ত পুরোপুরি সিল করতে চাইছে রাজ্য সরকার। বাংলাদেশি নাগরিকরাও এই পথে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে গা-ঢাকা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই বাংলার মানুষের সুরক্ষার স্বার্থে জলপাইগুড়ির অন্তর্গত বিন্নাগুড়িতে ০.০৫ একর এবং মালদার নারায়নপুরে ১৯.৭৩ একর জমি দেওয়া হবে বিএসএফকে।
মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই এই জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসএফকে ওই দুই জেলায় জমি দেওয়ার পাশাপাশি তিনটি জায়গায় হোম স্টে করার জন্য জমির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুটি হোম স্টে হবে আলিপুরদুয়ারে এবং একটি হোম স্টে হবে জলপাইগুড়িতে। চারটি চা-বাগান থেকে এই জমি নেওয়া হচ্ছে। সেখানেই গড়ে উঠবে পর্যটকদের জন্য সুন্দর হোম স্টে। বিজেপি অভিযোগ করে জমি দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশ নিয়ে বারবার বলেন, ‘বর্ডার বিএসএফের দেখার কথা।’ এবার জমিও দেওয়া হচ্ছে।