সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ভাঙড়ে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রেজ্জাক খান খুনে দলেরই নেতা মোফাজ্জল মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মোফাজ্জলই এই হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এলাকা দখলের বিবাদ এবং আর্থিক লেনদেন নিয়ে রেজ্জাকের সঙ্গে মোফাজ্জলের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ছিল। এর জেরেই মোফাজ্জল ভাড়াটে খুনি দিয়ে রেজ্জাককে হত্যা করিয়েছেন বলে অনুমান পুলিশের।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পার্টি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে রেজ্জাক খানকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনায় প্রথমে আইএসএফ-এর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ তৃণমূল নেতা মোফাজ্জল মোল্লাকে গ্রেফতার করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রেজ্জাক ও মোফাজ্জল দুজনেই পরাজিত হলেও, রেজ্জাকের দ্রুত উত্থান মোফাজ্জল মেনে নিতে পারেননি। এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী রেজ্জাকের স্ত্রীকে রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্জাক খুনের ঘটনার সময় অকুস্থলে হাজির ছিলেন মোফাজ্জেল। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা গিয়েছে। মোফাজ্জেল সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যদিও মোফাজ্জেল নিজে রজ্জাককে খুন করেছে নাকি খুন করতে সহায়তা করছে সে বিষয়ে এখনও পুলিশ কিছু বলেনি।
উত্তর কাশিপুর থানার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দফতর গুন্ডা দমন শাখা এবং স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের দুঁদে অফিসাররা এই ঘটনার তদন্ত করছে। পাশাপাশি ফরেন্সিক টিম যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, রাজ্জাকের বাজেয়াপ্ত করা মোবাইল এখনও খুলতে পারেনি পুলিশ। সেই মোবাইলের মধ্যে কী আছে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের অনুমান মোবাইলটি চালু করা গেলে অনেক তথ্যই পুলিশের সামনে আসবে।
রেজ্জাক খুনের পর শুধু বিরোধীরা নয় পুলিশের আতশ কাচের তলায় তৃণমূলের নেতারাও। চালতা বেড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল কর্মী, বুথ স্তরের নেতা, চালতাবেড়িয়া অঞ্চলের পঞ্চায়েত সদস্য এমনকি ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ পুলিশের সন্দেহের তালিকার বাইরে নয় বলে জানা গিয়েছে। রেজ্জাকের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, লেনদেন এবং বিরোধ সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর। রাজ্জাক খুন হওয়াতে রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে কোন কোন নেতা লাভবান হতে পারেন সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যে দু’জন পঞ্চায়েত স্তরের নেতা ও সদস্যকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।