সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশে এখন থেকে নাকি সিঙ্গাড়া/জিলিপি খাওয়া যাবে না। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনো বিজ্ঞপ্তি নয়। আমরা সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা এই বিজ্ঞপ্তি কার্যকরও করব না।” এভাবেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা বাংলায় কার্যকর করা হবে না বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, “আমার মনে হয়, সিঙ্গাড়া এবং জিলিপি অন্যান্য রাজ্যেও জনপ্রিয়। সেইসব রাজ্যের মানুষরাও এই খাবারগুলি ভালোবাসেন।
মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করা সঠিক কাজ নয়।”
প্রসঙ্গত, শিঙাড়া, জিলিপির মতো খাবারগুলি নিয়ে সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’। যেখানে বলা হয়েছে, এই ধরনের খাবারে কত পরিমাণ চর্বি (ফ্যাট), শর্করা (সুগার) থাকে, তাতে কী ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে সতর্ক করতে হবে মানুষকে। কিন্তু কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা বাংলায় মানা হবে না বলে ঘোষণা করে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। মঙ্গলবার দলের তরফে কুণাল ঘোষ কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকাকে ‘ফতোয়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’-এর তরফে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের এ ব্যাপারে যথাযথ শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশিই রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্যাফেটেরিয়া, জনবহুল জায়গায় শিঙাড়া, জিলিপির মতো খাবারে ‘শারীরিক ঝুঁকি’র বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে সতর্ক করতে হবে মানুষকে। যদিও কোনও ভাবেই এই খাবারগুলি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়নি নির্দেশিকায়। বিভিন্ন রাজ্যের এমসেও নির্দেশিকা পাঠিয়েছে ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’।
সার্বিক ভাবে এই নির্দেশিকাকে ‘খাদ্যাভাসে হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করছে তৃণমূল। শাসকদলের মুখপাত্র তথা অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল বলেন, ”শিঙাড়া জিলিপির উপর কুনজর পড়েছে কেন্দ্রের। নানা রকম ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের কোনও ফতোয়া মানা হবে না।” কুণাল আরও বলেন, ”শিঙাড়া-জিলিপি যাঁরা খান, তাঁদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। গুণমান যদি ঠিক থাকে, তা হলে কে কী ভাবে খাবেন তা নিয়ে বাংলায় কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না।’ তৃণমূলের তরফে এ-ও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, শিঙাড়া, জিলিপি কি সিগারেটের মতো নাকি, যে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দিতে হবে?

শিঙাড়া, জিলিপি ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে গুলাবজামুন, বড়াপাও, পকোড়া, চিপ্সের মতো একাধিক খাবার। কেন্দ্রের তরফে কেন এই নির্দেশিকা, তার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের অন্যতম এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ”একজন মানুষ যদি জানেন একটি গুলাবজামুনে কম করে ৬ চা-চামচ চিনি থাকে, তা হলে তিনি তা খাওয়ার ব্যাপারে দু’বার ভাববেন।” কোন প্রেক্ষিতে বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেছেন, ”চর্বি এবং শর্করা জাতীয় খাবারের কারণে তরুণ বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে একাধিক অসুখ হচ্ছে। ঘটছে প্রাণহানিও। সেই কারণেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সতর্ক করতে এই পদক্ষেপ।”