শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
‘গোটা দেশে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হয়ে গিয়েছে, অষ্টম বেতন কমিশনও হচ্ছে। অথচ আপনারা এখনও অর্ধেক মাইনে পাচ্ছেন। যাঁর জন্য কাজ করছেন, তিনিই আপনাদের মাইনে কমিয়ে রেখেছেন।’ এভাবেই অস্থায়ী সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের অবস্থান-বিক্ষোভের মঞ্চ থেকে রাজ্যের অস্থায়ী কর্মচারীদের পাশাপাশি স্থায়ী কর্মীদেরও পাশে টানার জন্য মমতার সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন শুভেন্দুর বারবার কেন্দ্র ও বিজেপি শাসিত রাজ্য বনাম পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টানেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা যেখানে বেতন কমিশনের সুফল পাচ্ছেন, সেখানে রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনিশ্চয়তায় পড়ে রয়েছেন। অষ্টম বেতন কমিশনের কারণে এই ফারাক আরও বাড়বে। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে প্রায় ছয় লক্ষ স্থায়ী পদ অবলুপ্ত করা হয়েছে। কাজের পুনর্নবীকরণের ‘গাজর’ ঝুলিয়ে রেখে কর্মীদের বঞ্চনা করা হচ্ছে।
শুক্রবার হাওড়ার মন্দিরতলার মঞ্চ থেকে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকাল একটা ভাল স্কুলে বাচ্চাকে পড়াতে মাসে ১০ হাজার টাকা লাগে।’ সিভিল ডিফেন্স ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এঁরা কারও দয়ায় পদ পাননি। প্রশিক্ষিত কর্মী হিসেবেই তাঁরা বিপর্যয়ের সময় জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে মানুষের পাশে দাঁড়ান। অথচ তাঁদের জন্য নেই স্থায়িত্ব, নেই ন্যূনতম আর্থিক সুরক্ষা। শুভেন্দুর দাবি, অন্য রাজ্যে এনডিআরএফ কর্মীরা ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান, এসডিআরএফ-এ সেই অঙ্ক প্রায় এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি। সেখানে বাংলায় হাজার হাজার কর্মী অস্থায়ী তকমা নিয়ে কাজ করছেন, সামান্য পারিশ্রমিকে। বিরোধী দলনেতার আরও অভিযোগ, ন্যূনতম মজুরি যেখানে ৫০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে, সেখানে রাজ্য সরকার প্রায় ১৪ হাজার কর্মীকে সেই সুবিধা দিচ্ছে না। ১,৫০০ টাকার বেকার ভাতা নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। পাশাপাশি পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজ্যের মাইনে কম। আপনারা রাস্তা থেকে যে টাকা তোলেন, সেটা আবার উঁচু, আইপিএস পদে চলে যায়। তারপর আবার সেটা ঘুরে কালীঘাট পৌঁছে যায়।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশে দীপু দাসের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনে দেখা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ওপারে ২ কোটি হিন্দু আছে। তাঁরা মার খাবেন, পুড়িয়ে দেবেন যুবক ছেলেগুলোকে, এই টুকু টুকু বাচ্চা, তরতাজা যুবকদের পুড়িয়ে মারবেন, আর এপারের ১০০ কোটি হিন্দু বসে বসে দেখবে, এ জিনিস হতে পারে না।’ বাংলাদেশে হিন্দু যুবক খুনের প্রতিবাদে এদিন মিছিল হয় কলকাতায়। দীপুচন্দ্র দাসের ছবি গলায় ঝুলিয়ে মিছিলে শামিল হন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিছিলে ছিলেন সাধুসন্ত, সনাতনীরা। শুভেন্দু-সহ ৫ জনকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেয় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশন। সেখানে ডেপুটেশন দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন, সাধুসন্ত সমাজ, বিজেপির প্রতিনিধিরা, আমরা সবাই চেষ্টা করেছি যে আমাদের আপত্তি-প্রতিবাদ-দাবি ডেপুটি হাই কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে। এরা যেভাবেই হোক আমাদের সোমবার থেকে এড়িয়ে গেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন, এখানে হিন্দুদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করতে। মঙ্গলবার যে আক্রমণ পুলিশ করেছে, লজ্জা লাগে…মোল্লা ইউনূসের পুলিশ যা, মমতার পুলিশও তাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ এখানে জানতে এসেছিলাম, দীপুচন্দ্র দাসের অপরাধ কী ? দেখাতে পারেনি, বলতে পারেননি। দীপুচন্দ্র দাস…ফেসবুক তো দূরের কথা, হোয়াটসঅ্যাপ তো দূরের কথা। আড়াইশো টাকার ছোট মোবাইল ব্যবহার করতেন। সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করার জন্য তাঁকে মেরেছে এবং পুলিশের হেফাজত থেকে ওই জেহাদি জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আধমরা করে পুড়িয়ে দিয়েছে। ওঁরা বললেন, ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। আমাদের মহারাজরা বলেছেন, তাহলে জামিন পেয়ে যাবেন। ওঁরা বললেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত জামিন পাবেন না। আপনাদের আমরা আশ্বস্ত করছি। দ্বিতীয় আমরা বলেছি, মৃত্যুর কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না। আপনারা ক্ষতিপূরণ কী করছেন ? বললেন, রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়েছে ওঁর পরিবারের। কী দায়িত্ব নিয়েছেন জনসমক্ষে জানান। আমরা পরিষ্কার বলেছি, হিন্দু নির্যাতন বন্ধ কবে হবে ? চিন্ময় প্রভুকে কোন অপরাধে দেড় বছর জেলে রেখেছেন ? ওঁদের লিমিটেশন আছে…ডেপুটি হাই কমিশনার কতটা উত্তর দেবেন। তবুও অনেকগুলো কথার উত্তর দিতে পারেননি। সাধুসমাজও বলেছে, এটা বন্ধ না হলে আমরা রিঅ্যাক্ট করব। আমি প্রশ্ন করেছি, আগে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কক্সবাজারে থাকতে দিয়েছিলেন কেন ? মুসলমান বলে। তাহলে ওপারে ২ কোটি হিন্দু আছে। তাঁরা মার খাবেন, পুড়িয়ে দেবেন যুবক ছেলেগুলোকে, এই টুকু টুকু বাচ্চা, তরতাজা যুবকদের পুড়িয়ে মারবেন, আর এপারের ১০০ কোটি হিন্দু বসে বসে দেখবে, এ জিনিস হতে পারে না।’