সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
কোনরকম লিখিত অনুমতি ছাড়াই ধর্মতলায় অনশন অবস্থানে বসে গিয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। কয়েকদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত জানিয়েছিলেন প্রতিবাদ হতেই পারে কিন্তু যে কোন জায়গায় যখন তখন অনুমতি ছাড়া প্রতিবাদ আন্দোলন চলতে পারেনা।
তবে কলকাতায় আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা যে সুপ্রিম কোর্ট অথবা প্রধান বিচারপতির নির্দেশ মেনে চলতে বিন্দুমাত্র রাজি নন তা তারা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
১৬৩ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মসূচি চলছে। তা নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন বলে জানালেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। সোমবার পুজো উপলক্ষে কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়।
সিপিকে প্রশ্ন করা হয়, ”আপনারাই তো ধর্মতলায় ১৬৩ ধারা জারি করেছেন। তার পরেও সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন চলছে। পুলিশ কী করবে?” জবাবে সিপি বলেন, ”এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” তবে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করবে পুলিশ, তা সিপি স্পষ্ট করেননি। এ বিষয়ে বেশি কথা বলেও চাননি তিনি।
শহরের কিছু বয়স্ক নাগরিক এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের নিয়ে সোমবার কলকাতা পুলিশ ‘পুজো দর্শন’ নামক কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে কলকাতার কিছু বড় পুজো দেখানোই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। সে প্রসঙ্গে সিপি বলেন, ”কলকাতা পুলিশ অনেক দিন ধরেই এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের ২২ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন, যাঁরা পুজোয় ইচ্ছা মতো ঘুরতে, বেরোতে পারেন না। সারা বছরই পুলিশ ওঁদের খোঁজ রাখে। এ বছর কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন চার হাজারের বেশি বয়স্ক নাগরিক এবং দু’হাজারের বেশি বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশু। ২২টি বাসে করে ঘোরানো হচ্ছে। সকলের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্তও করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাস্তার অনেকটা জায়গা আটকে অনশনে বসেছেন তাঁরা। রাস্তা ছেড়ে দিয়ে বা রাস্তার পাশে বসার নির্দেশ দেওয়া হোক, এই আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এক আইনজীবী। কিন্তু এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করল না উচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানান, এই মামলা যেহেতু সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন, তাই এই বিষয়ে এখনই কোনও হস্তক্ষেপ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। ওই আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, ওই রাস্তার অনেকটা জায়গা জুড়ে অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যে কারণে পথচলতি মানুষ তো বটেই, গাড়ি চলাচলেও অসুবিধে হচ্ছে। তাই তাঁরা যেন রাস্তার পাশে গিয়ে বসেন বা অন্য রাস্তায় তাঁদের অবস্থান চালান। কিন্তু সেই কথায় গুরুত্ব দিল না হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, রাজ্যকে দাবি পুরণের জন্য ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু তা পার হয়ে গেলেও কোনও সদত্তুর আসেনি সরকারের পক্ষে, এমনটাই অভিযোগ ছিল তাঁদের। এরপরই কথা মতো, অনশনে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রথম দফায় ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসছিলেন। যদিও এই ছ’জনের মধ্যে আরজি কর হাসপাতালের কেউ তখনও অবধি ছিলেন না। কিন্তু রবিবার রাতে সেই অনশনে যোগ দেন আর্জি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো।