সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“যারা স্বাস্থ্যসাথীর টাকা মিসইউজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে রাজ্য। আর জি কর আবহে স্বাস্থ্যসাথীর অপব্যবহার হয়েছে। এজন্য তদন্তও শুরু হয়েছে।” বিধানসভায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তও করাবে রাজ্য সরকার। মমতা এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘ওই সময় স্বাস্থ্যসাথীর টাকা অনেক বেশি খরচ করতে হয়েছে।’ স্বাস্থ্যসাথীর প্রকল্প টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এ বিষয়ে বড় পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারা যে সময় কর্মবিরতিতে ছিলেন, ঘটনাচক্রে সেই সময়ই স্বাস্থ্যসাথী খাতে খরচ বেড়েছে রাজ্য সরকারের। অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে কাজ না করলেও ওই সময় দিব্যি বেসরকারি হাসপাতালে প্র্যাকটিস করে গিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যসাথীর খরচও বেড়েছে সেকারণেই। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও সরব হয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তথ্য দেননি তিনি। এদিন বিধানসভায় মমতা বললেন, “কখনও কখনও অপ্রিয় সত্য বলতে নেই। হয়েছে এমন অনেক কিছু। আমাদের অনেক টাকা বেরিয়ে গেছে। আর জি কর মামলা বিচারাধীন। তাই ধরতে পেরেছি। এই স্বাস্থ্যসাথীর টাকা নিয়ে চিকিৎসা করেছে। আমি ভালো করে তদন্ত করেছি। ডবল ক্রস করছি।”
এদিন বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে মমতা বলেন, “স্বাস্থ্য সাথীর টাকা যে বা যারা মিসইউজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। মনে রাখতে হবে এটা জনগণের টাকা।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনি কাজ করলেন না অথচ ঘুরিয়ে টাকা নিলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আরজি কর কাণ্ডের সময় অভিযোগ উঠেছিল, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নষ্ট করে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সুবিধা করে দিতেই একাংশ চিকিৎসক কর্মবিরতিতে নেমেছেন। এ ব্যাপারে রাজ্যের যুক্তি, কেউ যদি সরকারি ক্ষেত্রে কর্মবিরতি পালন করেন তাহলে একই সময়ে তিনি বেসরকারি ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করতে পারেন? ওই ঘটনারই তদন্তে নেমেছে রাজ্য।
মমতা সাফ বলছেন, “এই টাকা যে অপব্যবহার করেছে..। এটা তদন্ত করে শাস্তি হবে। আপনার ইচ্ছা না থাকলে কাজ করবেন না। কিন্তু জনগণের টাকা মিস ইউজ করা যায় না। কে কীভাবে সেটা করেছে সেটার তদন্ত করে এটার শাস্তি হবে।”
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর এই সময়কালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি। নবান্ন সূত্রের খবর, এই কর্মবিরতির জেরে ওই সময়কালে স্বাস্থসাথী খাতে গড়ে দৈনিক ৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, আন্দোলনের জেরে দৈনিক ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে রাজ্যকে।
এদিন বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়ক সমীর কুমার জানা প্রশ্ন করেন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে মোট কত মানুষ উপকৃত হয়েছেন আর কত টাকা খরচ হয়েছে? জবাবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২১ লক্ষ ২৭ হাজার ২৪৯ জন মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন। এজন্য ২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৮০ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৭৬ জন উপকৃত হয়েছেন। মোট ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।