কনিষ্ক সামন্ত। কলকাতা সারাদিন।
“জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তার দল গ্রেফতারের পরেও রেশন চুরি বন্ধ হয়নি।” অভিযোগ করে এমন বিষ্ফোরক অভিযোগ করে নিজের অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে ভিডিও পোস্ট করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “তৃণমূলের নেতারা এখনও অভ্যাস বর্জন করেননি। এরা সেই একই ভাবে আবাস যোজনার নামে টাকা তুলতেই ব্যস্ত।” শনিবার এক্সবার্তায় এই অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রমাণ হিসাবে ভিডিও ও অডিও-ক্লিপও দাখিল করলেন তিনি।
তিনি এক্স-এ একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিও-এর ক্যাপশনে লেখা আছে,’গ্রীন ফরেস্ট হারবোটেক প্রাইভেট লিমিটেড রাইস মিল দ্বারা পিডিএস রাইস রি-মিলিং’। ভিডিওতে একটা গোডাউনে চারিদিকে ভর্তি বস্তা সারি করে রাখা দেখা গেছে। গোডাউনের চাতালে বেশ কিছু চাল উন্মুক্ত ফেলে রাখা হয়েছে। দুজন শ্রমিক রয়েছে সেখানে।
একজন শ্রমিককে চাতালে ফেলে রাখা চাল টেনে টেনে মেশিনের হলারে ভর্তি দেখা গেছে। ভিডিওতে একজন অচেনা ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, “চালটা কিনে পালিশ দেয়ার পর ফের রিফিলিং করা হচ্ছে। এই দেখুন স্যার রিফিলিং চলছে। আজ ফের গাড়ি আসবে।”
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং তার সহযোগীরা রেশন কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হবার পরেও পশ্চিমবঙ্গে রেশন চুরি বন্ধ হয়নি, তা যে এখনো চলছে এই ভিডিওটি তার প্রমান। পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের (পিডিএস) মাধ্যমে বিতরণ করা টন টন রেশনের চাল চুরি করে প্রথমে বেসরকারি রাইস মিলগুলিতে পাঠানো হচ্ছে, তারপরে রাইস মিল গুলি থেকে সেই চাল নতুন করে পালিশ করে তা প্যাকেজিং এর পর খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। কেন্দ্র সরকারের দেওয়া সাধারণ গরীব মানুষের জন্য বরাদ্দ রেশনের চাল রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি রাইস মিল-এর অসাধু যোগসাজশে এভাবেই দিনের পর দিন লুঠ হচ্ছে। আমি ইডি কে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তদন্তের জন্য অনুরোধ করছি।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ অক্টোবর রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যবসায়ী বলে পরিচিত বাকিবুর রহমানকে ইডি গ্রেপ্তারের পর প্রাক্তন খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দুর্নীতির সাম্রাজ্যের ছবি একে একে প্রকাশ্যে আসে। বাকিবুরকে জেরা করেই এই দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের যোগ পান ইডির তদন্তকারীরা। এর পর তাঁকেও গ্রেফতার করে ইডি। ওদিকে গত ৫ জানুয়ারী সকালে বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেসের পুরপ্রধান শংকর আঢ্যের বাড়িতে হানা দেন ইডির তদন্তকারীরা। দিনভর তল্লাশির পর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে বাড়ি থেকে বেরোতেই ইডির গাড়িতে হামলা হয়। রেশন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটের ভিত্তিতে শংকর আঢ্যকে গ্রেফতার করে ইডি।
শঙ্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে রেশন দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন তিনি। শংকর আঢ্য ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পত্তিরও সন্ধান পায় ইডি। এমনকী শংকর ও তাঁর পরিবারের নামে প্রায় ১০০টি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সংস্থা রয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে।
এই মামলায় তৃণমূলের আর এক নেতা সন্দেশখালীর শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযানে গেলে তদন্তকারী দল এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পাঁচজন আধিকারিক গুরুতর যখন হন। শাহজাহান ও তার কিছু সাগরেদ এখন জেলে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির দাবি, রাজ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার রেশন দুর্নীতি হয়েছে। যার মধ্যে বাকিবুর রহমানের সংস্থা ১ হাজার কোটির দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
সংস্থার আরও দাবি, বাকি ৯ হাজার কোটির দুর্নীতি করেছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা আরও একাধিক রাইস ও আটা মিল এবং এই সমস্ত রাইস মিল ও আটা মিলগুলির মালিকদের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তবে এই সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নাম পরিচয় এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনেননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা।