শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“ভূতুড়ে ভোট তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রোহিঙ্গা মুসলিম, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।” গতকালই নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে ভূতুড়ে ভোটার লিস্ট নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর সেই অভিযোগের পাল্টা এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, “৯টা সীমান্তবর্তী জেলায় ভূতুড়ে ভোটারের নাম তুলেছে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে আধার ও এপিক লিংক করে বায়োমেট্রিক মেশিন দিয়ে ভোট করাতে হবে।”
শুভেন্দুর অভিযোগ, “মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ গত শনিবার জেলাশাসকদের সঙ্গে নবান্ন থেকে বৈঠক করেছেন। মুখ্যসচিব এমন কোনও বৈঠক করতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রী যে ৯ জনের নাম বলেছেন, সিইও ইনচার্জ আমাদের বলেছেন, ওগুলো বেসলেস ও ফেক। কমিশন বলছে, কোনও কারণে প্রিন্টিং মিসটেক আছে হয়ত, ঠিক করে দেওয়া হবে। আমরা বারবার বলেছি রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাম পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় আছে। আপনারা কী করেছেন? আমরা মাথায় করে ১৫০০০ পাতার অভিযোগ জমা করেছি যে ১৬ লক্ষ ডবল এন্ট্রি আছে। কমিশন সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ লক্ষ বাদ দিয়েছে। আমরা চাই ১৬ লক্ষ ডবল এন্ট্রি বাতিল করতে হবে। মমতা যেসব উদাহরণ দিয়েছেন, সে সম্পর্কে কমিশন বলেছে এগুলো ভুল তথ্য।”
ভূতুড়ে ভোটার সরাতে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন মমতা। শুভেন্দু এদিন উল্লেখ করেছেন, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের একটি সার্কুলারে বলা হয়েছে, ভোটার লিস্ট আবর্জনা মুক্ত করতে রবিবার ডেবরা অডিটোরিয়ামে সবাইকে জড় করতে হবে। শুভেন্দু বলেন, “তুমি কে হরিদাস? ভোটার লিস্টে হস্তক্ষেপ করছ?” জেলাশাসকদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘আপনারা ঠিক করুন কার কথা শুনবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনবেন, নাকি নিজেদের চাকরি বাঁচাবেন?’ শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, বিডিও-দের একাংশের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর তালে তাল মেলাবেন।
পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে গতকালই তৃণমূলের মেগা সমাবেশ থেকে ভোটার তালিকায় ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে তাঁর নিশানায় নির্বাচন কমিশন। বিজেপি-র মদতে নির্বাচন কমিশনের লোকজন ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করেন শুভেন্দু অধিকারী। এই বিষয়টি নিয়েই এবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
চিঠিতে শুভেন্দু লিখেছেন, ”পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আপনার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। উনি বলতে চান, সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে নাকি বিজেপি প্রভাবিত করছে। তৃণমূলের অভিযোগ, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে বিজেপি নিজেদের লোককে বসাচ্ছে। উনি ভাল করেই জানেন, আপনার নিয়োগ ২০২৩ সালের নতুন আইনের মাধ্যমে হয়েছে। নতুন এই আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্যানেলে থাকেন। নিরপেক্ষ এই পদ্ধতিতেই আপনার নিয়োগ হয়েছে। এর আগে নিয়ম ছিল, বয়োজ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদটি পাবেন। সেই নিয়ম অনুযায়ীও এই পদ আপনারই পাওয়ার কথা ছিল। কারণ, রাজীব কুমারের পর আপনিই নির্বাচন কমিশনার হিসাবে বয়োজ্যেষ্ঠ।” মমতার বক্তব্যের ওই অংশটুকুর ভিডিয়ো চিঠির সঙ্গে পাঠিয়েছেন শুভেন্দু। ইংরেজিতে তা অনুবাদও করে দিয়েছেন বোঝার সুবিধার জন্য। মমতা নেতাজি ইন্ডোর থেকে অভিযোগ করেন, বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘ঘনিষ্ঠ’। তিনি এক সময়ে গুজরাতে শাহের অধীন সমবায় দফতরের সচিব পদে কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, ”আমি নির্বাচন কমিশনকে শ্রদ্ধা করতাম। এখনও করি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার পদে কাকে বসিয়েছে জানেন? টোটালটাই বিজেপির লোক।”
শুভেন্দু লিখেছেন, ”কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে আপনার কাজের সময়টিকে তুলে ধরেছেন মমতা। কিন্তু উনি এটা উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছেন যে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব যিনি পান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সচিব পদে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। নির্বাচন কমিশন একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, যা দেশের ভোটপ্রক্রিয়া নিরপেক্ষ ভাবে পরিচালনা করে। ভারতের সংবিধান কমিশনকে এই অধিকার দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই কমিশনকে আক্রমণ করে সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার এক্তিয়ারই ওঁর নেই।”

তাঁর কথায়, ”দিল্লি আর মহারাষ্ট্রে নাকি বিজেপি জিতেছে হরিয়ানা আর গুজরাতের ভুয়ো ভোটারের মাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার সংশোধন না করা হলে তিনি নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে ধর্নায় বসবেন বলেছেন। মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকায় যে বেআইনি কিছু ছিল না, কমিশন আগেই তা জানিয়েছে। স্বচ্ছ ভাবে ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মমতা তা জানেন। তা সত্ত্বেও তিনি এই ধরনের মন্তব্য করছেন, জনগণের মনে অযথা উদ্বেগ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে। কমিশনকে অপদস্থ করার এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানাচ্ছি।”