শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভুয়ো ভোটার নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিষয়ে শান্তিপুরের বিডিও-র বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছেমতো সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার অভিযোগ তুললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শনিবার এক্স হ্যান্ডেলে একটি চিঠি পোস্ট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। চিঠিতে সই রয়েছে শান্তিপুরের বিডিও-র। চিঠির বয়ান ২০২৫ সালের হলেও দুই জায়গায় ২০২৪ সালও রয়েছে। চিঠি পোস্ট করে শুভেন্দু লিখেছেন, আগামী ৫ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটেয় নিজের চেম্বারে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন বিডিও। যে বৈঠকের এজেন্ডা বুথ লেভেল এজেন্ট, মৃত ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার-সহ নানা বিষয়। কিন্তু, এই ধরনের বৈঠক ডাকা পক্ষপাতমূলক আচরণ বলে অভিযোগ শুভেন্দুর।
তিনি বলেন, এই ধরনের সর্বদলীয় বৈঠক শুধুমাত্র সিইও কিংবা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই করা যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি লেখেন, ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। ওই তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ না-দিলে আর কোনও সংশোধন সম্ভব নয় বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। তাঁর অভিযোগ, কমিশনের কোনও নির্দেশ ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন শান্তিপুরের বিডিও।
শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ শান্তিপুর বিধানসভা এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভার এইআরও। শুভেন্দুর অভিযোগ, ওই বিডিও তাঁর রাজনৈতিক ‘বস’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করতে এই ধরনের বৈঠক ডেকেছেন। শান্তিপুরের বিডিও-র বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে আর্জি জানান বিরোধী দলনেতা।
যদিও শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষের বক্তব্য, এ ধরনের বৈঠকের জন্য কমিশনের অনুমতি আবশ্যক নয়। তিনি বলেন, “এটি একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস (চলমান প্রক্রিয়া)। নির্বাচন কমিশনের আলাদা অনুমতির প্রয়োজন হয় না। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের বুথ স্তরের প্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
শুভেন্দুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী জানান, ওই বৈঠকে শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমকেও ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিডিওর ডাকা বৈঠক অসাংবিধানিক হওয়ার অভিযোগ যখন বিরোধী দলনেতা করছেন, তখন সেই অভিযোগ প্রমাণ করার দায় এবং দায়িত্ব সবই ওঁর। যে বৈঠক বিডিও ডেকেছেন, সেখানে তো শুধু তৃণমূলের প্রতিনিধি নেই। সেখানে ওঁর দল (বিজেপি), কংগ্রেস এবং সিপিএমের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে। এই বৈঠক কী ভাবে অসাংবিধানিক হয়, তা তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে।”
তবে বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই নদিয়ার শান্তিপুরের বিডিও-র সর্বদল বৈঠক ডাকার বিষয়টি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরের নজরে আনল রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতর। সিইও দফতর সূত্রে খবর, এ বিষয়ে কমিশনের দিল্লি অফিসকে বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দিব্যেন্দু দাস। দিল্লি থেকে জবাব এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রেখবর।