ডা: পল্লবিকা মন্ডল, এমবিবিএস, এম এস ( জেনারেল সার্জারি), এমসিএইচ (সার্জিক্যাল অনকোলজি) এইমস নিউ দিল্লি, কনসালট্যান্ট অনকো সার্জন, পিয়ারলেস হাসপাতাল, কলকাতা। ফোন ৯৯০৩৩৬৪৫৬২
বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। রোগ নির্ধারণের সময় রোগী জানতে পারেন তার ক্যান্সারের স্টেজ বা ধাপ, যা সাধারণত ১ থেকে ৪ পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যদিও এই স্টেজিং সিস্টেম রোগীদের তাদের অবস্থার ধারণা দিতে সাহায্য করার জন্য তৈরি হয়েছে, এটি অনেক সময় বোঝা কঠিন এবং জটিল মনে হতে পারে।
তাহলে ক্যান্সারের স্টেজ আসলে কী বোঝায়?
ক্যান্সারের স্টেজ সংখ্যা বোঝার জন্য প্রথমে আমাদের তিনটি বিষয় বুঝতে হবে যা এই সংখ্যা নির্ধারণ করে। ডাক্তাররা “T,” “N,” এবং “M” নামক একটি সিস্টেম ব্যবহার করেন:
T (Tumor): টিউমারের আকার।
N (Node): লিম্ফ নোডে টিউমারের উপস্থিতি।
M (Metastasis): টিউমার শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বা হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা।
এই স্টেজ নির্ধারণ প্রক্রিয়া:
ডাক্তাররা রোগীর উপসর্গ, শারীরিক অবস্থা এবং বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে এই স্টেজ নির্ধারণ করেন। এতে টিউমারের টিস্যু বায়োপসি, রেডিওলজিক্যাল বা নিউক্লিয়ার স্ক্যান, এবং রক্ত পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়।
T (Tumor): এটি সাধারণত ১ থেকে ৪ পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং মূলত টিউমারের আকারের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। তবে, প্রতিটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে T-এর মাপকাঠি ভিন্ন হতে পারে। যেমন, মুখগহ্বরের ৫ সেমি টিউমার T3 ধাপে পড়ে, কিন্তু স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি T2 ধাপে পড়ে।
N (Node): লিম্ফ নোডে ক্যান্সারের উপস্থিতি যাচাই করতে ডাক্তাররা বায়োপসি বা ইমেজিং করেন। ক্যান্সার কোষ প্রাথমিক টিউমার থেকে ভেঙে গিয়ে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বড়, দূরবর্তী এবং বেশি সংখ্যক লিম্ফ নোডে ক্যান্সারের উপস্থিতি থাকলে, N স্টেজও বেশি হয়।
M (Metastasis): এটি বোঝায় ক্যান্সার কোষ শরীরের অন্য অঙ্গে বা হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা। সাধারণত মেটাস্টাসিস থাকলে ক্যান্সার বেশি মারাত্মক হয়। তবে সাম্প্রতিক চিকিৎসা অগ্রগতির কারণে M স্টেজ নতুনভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এখন ডাক্তাররা দেখেন ক্যান্সার কতগুলো অঙ্গে ছড়িয়েছে, তার বৈশিষ্ট্য কেমন এবং কী পরিমাণে ছড়িয়েছে।
TNM থেকে স্টেজ সংখ্যা:
TNM-এর বিভিন্ন কম্বিনেশন ক্যান্সারের সামগ্রিক স্টেজ নির্ধারণ করে। এটি চিকিৎসার জটিলতার উপর ভিত্তি করে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। তবে প্রতিটি ক্যান্সারের জন্য এই নিয়ম আলাদা।
যেমন,
স্তন ক্যান্সারের T3N1M0 স্টেজ ধরা হলে এটি স্টেজ ৩ বলে গণ্য হয় এবং এর ৫ বছরের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮৫%।একই TNM কম্বিনেশন যদি প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে হয়, তবে এটি স্টেজ ২ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এর বেঁচে থাকার হার মাত্র ১৫%।
স্টেজিং সিস্টেমের পরিবর্তন:
ক্যান্সারের স্টেজিং সিস্টেম সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে স্টেজ ৪ হিসেবে বিবেচিত একটি থ্রোট ক্যান্সার ২০১৮ সালে স্টেজ ১ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ নতুন স্টেজিং নিয়মগুলো রোগীদের চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসার অগ্রগতি:
গবেষণা এবং জেনেটিক টেস্টিং-এর উন্নতির কারণে স্তন, প্রোস্টেট এবং গাইনোকলজিক্যাল ক্যান্সারের স্টেজিং নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। আগে যেসব ক্যান্সার প্রায় অসম্ভব বলে মনে হতো, সেগুলোও এখন বেশি সফলতার সাথে চিকিৎসা করা যাচ্ছে।
ভবিষ্যতের আশা:
স্ক্রিনিং এবং চিকিৎসার উন্নতির কারণে অনেক ক্যান্সার আগেভাগে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। স্টেজিং পদ্ধতির এই অগ্রগতি চিকিৎসায় আরও ভালো ফলাফল, লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা এবং ভবিষ্যতে আরও আশার আলো নিয়ে আসছে।