শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
বাংলাদেশে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার কলকাতার রাজপথে। দুপুরে শিয়ালদহ থেকে মিছিল শুরু করে বাংলাদেশ হাই কমিশন পর্যন্ত যায়। মিছিল থেকে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর মুক্তির দাবি তোলেন। এর পাশাপাশি তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যাচার চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপিও। এদিন শিয়ালদহ থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত মিছিলও করে বিজেপি। কিন্তু, মিছিল শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় ব্যাপক অশান্তি। পুলিশ মিছিল আটকাতেই একেবারে ধুন্ধুমার কাণ্ড।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের দফতরের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন সনাতনী সমাজের সদস্যরা। তার পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। একজন পুলিশকর্মী আহত হন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। ব্যারিকেডের নিচে চাপা পড়ে আহত কয়েকজন। ধস্তাধস্তির মধ্যেই এক পুলিশ কর্মীর মাথা ফেটে যায়
অশান্তির আগুন জ্বলছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। বাংলাদেশ সনাতনী মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সোমবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত জেলেই রয়েছেন ইসকনের পুন্ডরীক ধামের এই ধর্মগুরু। তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করেছে সেদেশের আদালত। এদিকে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
পড়শি দেশের সেই বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে এপার বাংলাতেও।
এদিকে এই প্রতিবাদ মিছিলের মাঝেই বিস্ফোরক তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল ঘোষ বলেন, আজকে বাংলাদেশ বিষয়টা নিয়ে, সংগঠনের নামে মিছিল করা হল, এটা পুরো বিজেপি বা তাঁদের সমর্থকদের, একটা বিশৃঙ্খল মিছিল। এটা মূল বিষয়টাকে লঘু করে দিচ্ছে। মিছিলে কয়েকজন সাধু-সন্ন্যাসী রয়েছে মিছিলে। আর বাকি হচ্ছে, ওই ফেট্টি ধরে, হইচই করে যাওয়া। ‘সন্ন্যাসীদের মিছিল থেকে জুতো মারো তালে তালে, এই স্লোগান কখনও উঠছে পারে ? এ হতে পারে কখনও ? হয় না। পুলিশের দিকে এগিয়ে ইট পাটকেল ছোঁড়া, কখনও ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করা। এটা প্রকৃত যারা হিন্দু সন্ন্যাসী, তাঁরা কখনও একাজ করতে পারেন না। বিজেপি আজকে যেটা করেছে, তাতে আরও বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এই অনভিপ্রেত, দুভার্গ্যজনক ঘটনাকে নিয়ে তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে নেমেছে। তাতে সমস্যাটা কী হচ্ছে ? এই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে নেমে, তারা মূল ইস্যুটার গুরুত্বটাকে লঘু করে দিচ্ছে।’
চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তি চেয়ে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের পাশাপাশি ইসকনের চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারির বিষয়টিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে থেমে নেই বাংলাদেশ, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি ও সংখ্যালঘুদের উপর ‘হামলা’ নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মন্তব্যকে পাল্টা দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সরকার। গোটা বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও পাল্টা বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার।
এদিকে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নারকীয় নির্যাতন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মৌনতাকে কটাক্ষ করলেন আইএসএফ বিধায়ক তথা ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা নওসাদ সিদ্দিকি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ভারত সরকারের কঠোর হাতে বার্তা দেওয়ার দরকার ছিল। সেকাজে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এদিন নওসাদ বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটছে তা কখনও কাম্য নয়। এটা একটা আন্তর্জাতিক ঘটনা। ভারত সরকারের কঠোর হাতে বার্তা দেওয়ার দরকার ছিল। সেকাজে তারা ব্যর্থ হয়েছে। যিনি নিজেকে হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা বলে জাহির করছেন তাঁর এখনও কোনও বিবৃতি দেখতে পেলাম না। প্রতিবেশী বাংলাদেশ শান্ত থাকুক। সঙ্গে সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপরে যে দমন পীড়ন চলছে সেটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার কড়া বিবৃতি জারি করে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। বিবৃতিতে তারা সেদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবি পেশ করলেও হিন্দুদের গ্রেফতার করা হচ্ছে অথচ মৌলবাদীরা সেদেশে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে সেদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।