সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, "একজন শিক্ষিত মা-ই কেবলমাত্র একটি শিক্ষিত জাতি তৈরি করতে পারেন। তাই সবার আগে প্রয়োজন মেয়েদের শিক্ষিত করা।"
নারী শিক্ষার প্রয়োজন এর কথা নেপোলিয়নের পরে বিশ্বের বহু মনীষী বহু ভাবে বলে গিয়েছেন। কারণ একজন মায়ের থেকেই প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে পারে তার শিশু।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাই এমন মায়েদের জন্য দুর্দান্ত উপহার দেওয়ার কথা ঘোষণা করল সোনারপুরের জ্যোতি শিশু বিহার স্কুলের ঘাসিয়াড়া ক্যাম্পাসের কর্তৃপক্ষ।
শিশুকালই হচ্ছে ভবিষ্যত জীবনের ভিত্তিভূমি। এই ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে ভবিষ্যতের আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে মায়ের ভূমিকাই প্রধান ও মুখ্য। একজন সচেতন, বিজ্ঞ মা-ই পারেন তার সন্তানকে যথার্থ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে। একজন শিশুর সবচেয়ে বড় সাথী হচ্ছে তার মা। মা শুধু একজন জন্মদাত্রী জননীই নন, সুন্দর চরিত্রবান সন্তান তৈরী করার কারিগরও বটে।
মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই শিশু তার মাতৃসত্তাকে অনুধাবন, অনুকরণ করে। মায়ের সব কাজ-কর্ম, চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, আচরণ, মূল্যবোধ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে। কারণ শিক্ষাকালীন নব্বইভাগ সময়ই শিশু মায়ের কাছেই থাকে। শিশুর প্রথম ও প্রকৃত শিক্ষক ও মা। একজন শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি মায়ের কাছ থেকেই হয়।
মায়ের মুখের ভাষাই শিশু প্রথম রপ্ত করতে থাকে। এমনকি শৈশবকাল থেকেই শিশু মায়ের প্রত্যেকটি আচরণ এবং কথাবার্তা অনুকরণ করতে শেখে। কারণ শিশুরা অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয়। মায়ের মাধ্যমেই শিশু তার পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। একজন শিশুর মানসিক গঠনে এবং চারিত্রিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

জ্যোতি শিশু বিহারের উপহার
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে স্কুলের পক্ষ থেকে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর মায়েদের আধুনিক যুগে যুগোপযোগী করে তোলার পাশাপাশি আরো স্বনির্ভর এবং তাদের স্বশক্তিকরনে ৬ মাসের জন্য একটি বিশেষ এন্ড পার্সোনালিটি মেকওভার কোর্স চালু করছে জ্যোতির্ময় স্কুল অফ এডুকেশন ট্রাস্ট।
স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কুলের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর মায়েদের আরো বেশি করে নিজেদের দক্ষতা বিকাশ করার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী হওয়ার জন্য বিশেষভাবে একটি কোর্স ডিজাইন করা হয়েছে।
The Empowerment, Wellness & Skill Development Program for Modern Mothers
—a unique initiative designed just for you!
এই ছয় মাসের কোর্সে থাকছেন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ এবং যোগা।
থাকবে পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট – ওয়ার্কিং ওমেন হোন অথবা হাউস ওয়াইফ, প্রত্যেক মহিলার মধ্যেই থাকে বিশেষ ধরনের কিছু দক্ষতা। কিন্তু সুযোগ এবং পরিস্থিতির অভাবে তারা অনেক সময় নিজের সেই দক্ষতাকে প্রকাশ্যে আনতে পারেন না। পারেন না নিজের বক্তব্যকে সকলের সামনে উপস্থাপিত করতে। এই কোর্সে সেই বিষয়গুলির উপরেও নজর দেওয়া হবে।
বেসিক সেলফ ডিফেন্স – মহিলাদের প্রত্যেকের আত্মবিশ্বাস এবং জরুরী পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ক্যারাটে শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এছাড়া রয়েছে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস। আগে অধিকাংশ পরিবারেই বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর ফলে বর্তমানে ছেলে-মেয়েকে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করালেও তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে খুব একটা নজরদারি করতে পারে না বাংলা মিডিয়ামে পড়া মায়েরা।
এই সমস্যার সমাধানের জন্য স্কুলের কর্ণধার তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডক্টর পার্থ সারথী গাঙ্গুলী কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের মায়েদের স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। নারী দিবস উপলক্ষে স্কুলের কর্ণধারের সেই চিন্তাধারার কথাই ঘোষণা করলেন স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্ণধার পামেলা মুখোপাধ্যায়।