সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ঠিক আট দিন আগে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা তথা আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। আর আজ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিলেন ফুরফুরা শরীফের ইফতারে। রমজান মাসে ফুরফুরা শরিফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী থেকে আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ভোটের রাজনীতি করতে ফুরফুরায় গিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে ফুরফুরায় অনুষ্ঠানে পৌঁছে শুরুতেই ওই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের এই ধর্মের রাজনীতির অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি যখন দুর্গা পুজো করি, কালী পুজো করি তখন তো কেউ এই প্রশ্ন তোলেন না। তাহলে ইফতারে যোগ দিলে প্রশ্ন উঠছে কেন?”
খানিক থেমে জবাবও দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগে আমি খুব আসতাম। আকবর আলি খদ্দেকার আমাকে অনেকবার নিয়ে এসেছে। ১৬ বার এসেছি আমি। ফলে এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। খারাপ লাগে এটাই, আজকে আমি দেখছিলাম কিছু সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, কিছু কিছু টিভি চ্যানেল বলছে, এটা কি ভোটের সমীকরণ? আমি তাঁদের বলি, আমি যখন কাশী বিশ্বনাথে যাই, এই প্রশ্ন তো করেন না। আমি যখন পুষ্কর যাই, তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যখন খ্রীষ্টানদের নাইট সাপারে যাই, তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যখন দুর্গাপুজো করি, তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যখন কালীপুজো করি তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। জেনে রাখুন, আমি খ্রীস্টানদের উত্সবেও যাই। আমি ঈদ মোবারকেও যাই। আমি ইফতার নিজে করি। রোজাতেও যাই, ইফতারে যাই, ঈদেও যাই। আমি পঞ্জাবিদের গুরুদ্বারেও যাই, গুজরাটিদের ডান্ডিয়া নাচেও যাই। দোল পূর্ণিমাতেও যাই, মহাবীর জৈনের কাছেও যাই। সবাই শান্তিতে থাকুন, শান্তি-সম্প্রীতি এটাই আমাদের বার্তা।” অর্থাৎ বিরোধীদের আক্রমণকে পাত্তা না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাফ বোঝালেন রাজ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে তিনি কোনও আপস করতে রাজি নন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার মাটি সম্প্রীতির মাটি। সকলের হয়ে দোয়া করছি। সম্প্রীতি, শান্তি, ঐক্য বজায় থাকুক। সবাই ভাল থাকুক।”
বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি হুগলির ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা দেবে সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করে এলাকার উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের উপহার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন ত্বহা সিদ্দিকিকে সঙ্গে নিয়েই ইফতার পার্টিতে প্রবেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ত্বহা বলেন, ”আজ ওঁর কাছে কোনওদাবি রাখব না.. আমাদের যা আছে ওঁকে ব্যাক্তিগত ভাবে বলব।” তবে না চাইতেও এদিন একাধিক উপহার সাজিয়ে এনেছিলেন মমতা।

উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”অনেক কিছু প্রকল্প হয়ে আছে। আমি সেইগুলো উদ্বোধন করে দিলাম ডিএম সাক্ষী রেখে। এখানে একটা পলিটেকনিক কলেজের কথা বলেছে সেটা করে দাও। আর একটা বাসস্ট্যান্ড করে দাও। আবু বকর সাহেবের নামে পলিটেকনিক কলেজটা হবে। হাসপাতাল যেটা হবে ১০০ বেডের, সেটার কাজও শেষের দিকে। ওবিসি দের মামলাটা কোর্টে আছে। আমরা চেষ্টা করছি। অনেক ডক্টর, নার্স দের নিয়োগের লিস্ট তৈরি হয়ে রয়েছে।”