সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
শনিবার সাতসকালে বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সামনেই বাবা-ছেলেকে টেনে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে, থেঁতলে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার ৩ দিন পর পুলিশের জালে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ সূত্রের খবর, খুন করে সুতি দিয়ে বাংলাদেশে পালানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছিল একজন। আরেকজন ঘাঁটি গেড়েছিল বীরভূমে।
ওয়াকফ সংশোধিত আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদের নামে জ্বলছে হিংসার আগুন। আর তাতেই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে কিছু নিরীহ মানুষের জীবন। যেমন ধুলিয়ানের জাফরাবাদে নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দাস পরিবার। বাড়ি থেকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে থেঁতলে খুন করা হয়েছে বাবা-ছেলেকে। নিহতদের নাম হরগোবিন্দ দাস (৭০) এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস (৪০)। সেই ঘটনার পরই তৎপর হয় পুলিশ। বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়, পুলিশ দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করবেই। “দরকারে পাতাল থেকে তুলে আনা হবে দুষ্কৃতীদের”, গতকালই সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম । তারপরই মঙ্গলবার এই গ্রেফতারি।
মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তে একটি সিট গঠন করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা এলাকার প্রতিটি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। সেই সূত্র ধরেই ফোর্স পৌঁছে যায় বীরভূমে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় একজনকে। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই আরেকজনের খোঁজ পাওয়া যায়। ধৃত কালুই জানায়, ভাই দিলাবর নাদাব সুতিতে। বাংলাদেশ বর্ডারের অদূরেই গা-ঢাকা দিয়েছিল এক অভিযুক্ত। পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার । তার আগেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। সেদিন দাস পরিবারে তাণ্ডব চালানো বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তবে এরাই মূল অভিযুক্ত , দাবি পুলিশের। কেন তারা খুন করল, জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। মঙ্গলবারই তাদের আদালতে পেশ করা হচ্ছে,
রাজ্য পুলিশের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম জানান, “এখনও অনেক গুজব ছড়াচ্ছে। যত বেশি গুজব ছড়াবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া খুব কঠিন। মানসিক অস্থিরতা আগে কমানো দরকার।” পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে গুজব রুখতে সোশাল সাইটে নজর রাখছে পুলিশ। এর মধ্যেই উস্কানিমূলক পোস্ট করার অভিযোগে ১ হাজার ৯৩ সোশাল অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে পুলিশ।
আর এর মধ্যেই মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে নতুন করে মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতেরই নজরদারিতে অশান্তির ঘটনার তদন্ত চেয়ে এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিশেষ দল গঠন করার আবেদনও বলা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতে এহেন মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মামলার শুনানি কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকেই নজর সবার। সুপ্রিম কোর্টে শশাঙ্কশেখর ঝা নামে এক আইনজীবী এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন। আবেদনে আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, সমস্ত ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিৎ।

ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ফলে এই বিষয়ে বিশেষ দল গঠন করে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিরতে তদন্ত করা হয় সেই আবেদন জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ওয়াকফ আইন নিয়ে যাতে অশান্তি না হয় সেই আবেদনও জানানো হয়েছে। যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।