সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“বর্ডার দেখে বিএসএফ, গরু দেখে বিএসএফ কয়লা দেখে সিআইএসএফ। শুধু শুধু আমাদের জড়াচ্ছেন কেন? খালি মিথ্যে কথা।” এভাবেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদের বহিরাগতরা ঢুকে হিংসা ছড়িয়েছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর! সীমান্তে বিএসএফ প্রহরায় থাকার পরও কীভাবে অনুপ্রবেশ হল? বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, সীমান্তের দায়িত্ব কেন্দ্র। সুতরাং সেখানে সমস্যা হলে দায়িত্ব নেবে তারা।
বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাইরে থেকেও কেউ কেউ এসে অশান্তি পাকিয়েছে। আমাদের নয়। ভয়ও দেখাচ্ছে।” মুর্শিদাবাদের হিংসা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসছে জাতীয় মহিলা কমিশন। যাচ্ছেন রাজ্যপাল।
এমনকী, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও আসতে পারে বলে সূত্রের দাবি। যা নিয়ে মমতা বলেন,”হোম মিনিস্টারকে ত্রিপুরা, মণিপুর যেতে বলুন। অসমে যেতে বলুন। ত্রিপুরা-অসম-মণিপুর আমাদের হাতে নেই। বর্ডারও আমাদের হাতে নেই। এটা মনে রাখবেন।” মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, “আগে বর্ডারের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফের হাতে ছিল। বর্তমান হোম মিনিস্টার আইন করে ৫০ কিলোমিটার করে দিয়েছে। অর্থাৎ আমাদের মানুষ থাকলেও আমরা গিয়ে দেখা করতে পারি না। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না।”
রাজ্য সরকারের হাত থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “রাজ্য সরকারের হাত থেকে ৫০ কিলোমিটার জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেন এটা হবে? প্রথম দিন থেকে আমি এর প্রতিবাদ করেছি। এবং এর প্রতিবাদ করে যাব।” তিনি আরও জানান, আগে নিয়ম ছিল সীমান্তের কাছে রাজ্য় পুলিশ থাকত। বাইরে থেকে কারা, কী কারণে আসা-যাওয়া করছে, তা নথিবদ্ধ করে রাখত। কিন্তু অমিত শাহ এসে সেই নিয়ম বদলে দিয়েছেন। এরপরই মমতার অভিযোগ, “এখন আর আমাদের অফিসারদের অ্যালাও করে না। ফলে তথ্য ভাগাভাগি করতে পারি না।”
অন্যদিকে, শালবনীতে গিয়ে জিন্দল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব ঠিক থাকলে, ২১ এপ্রিল, আগামী সোমবারই এই প্রকল্প শিলান্যাস করে কাজ শুরু করা হবে বলে জানালেন মমতা। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ইতিমধ্যেই অনেকগুলো পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ চলছে। এর মধ্যে শালবনীতে ১৬০০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ারপ্ল্যান্ট তৈরি হবে। জিন্দলরা খরচ করছেন ১৬ হাজার কোটি টাকার উপরে। কমপিটিটিভ বিডিংয়ের মাধ্যমে ওঁরা এই প্রোজেক্টের বরাত পেয়েছেন। পূর্বভারতে এমন প্রোজেক্ট আর নেই। আগামী সোমবার আমি ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ গিয়ে এটার শিলান্যাস করব। জিন্দল সাহেবও থাকবেন, ওঁর ছেলেও থাকবেন।”
এর পরে ২২ তারিখে গড়বেতার গোয়ালতোড়ে গিয়ে একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনা করার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি জার্মান কোম্পানির সহায়তায়, ৭৫৭ কোটি টাকার এই গ্রিন প্রোজেক্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কথা তোলেন। জানান, কাজ শুরু হয়ে গেছে, উদ্বোধন করার অপেক্ষা। দেওচা পাচামি নিয়েও স্থানীয় মানুষদের ধন্যবাদ জানান তিনি। জমিহারাদের যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, চাকরি দেওয়া হয়েছে, সেকথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দিনে আরও জমি পেলে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে, আরও বাড়ানো হবে কাজ। গোটা এলাকা ধরে বাজার, হাসপাতাল, স্কুল তৈরির কথাও বলেন তিনি। উল্লেখ করেন, এটিই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি বলে। তাঁর কথায়, ‘বিশ্ব এসেছে বাংলার ঘরে।’