শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
‘কমবেশি প্রতিটি বুথেই ৩০ থেকে ৫০ জন মৃত ভোট রয়েছে, যাদের নাম গণতন্ত্রের পরিচ্ছন্নতার জন্য বাতিল করা দরকার।’ বাংলায় ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এমন দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলায় এসআইআর-এর কাজ খতিয়ে দেখতে বুধবারই বাংলায় এসেছিল নির্বাচন কমিশনের বিশেষ টিম। ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতীর নেতৃত্বে এদিন বৈঠকও হয়। আর সেই বৈঠকে যে ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে ১৫ অক্টোবরের পরই বাংলায় এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হতে পারে। যদিও তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরিচালিত ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ বা এসআইআর প্রক্রিয়াটিকে স্বাগত জানিয়ে শুভেন্দু এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানান, এই প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের স্বার্থে অপরিহার্য। বিরোধী দলনেতার কথায়, ভোটার তালিকা থেকে শুধুমাত্র ৪ ধরনের নাম বাদ যাওয়ার কথা। মৃত ভোটার, ডাবল বা ট্রিপল এন্ট্রি, ভুয়ো ভোটার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, বিশেষত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ যাবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। শুভেন্দুর দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রক্রিয়া চলার ফলে কোনও ভারতীয় নাগরিক, সে যে ধর্ম বা সম্প্রদায়েরই হোক না কেন, তাঁর নাম বাদ যাবে না। বিহারের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু জানান, সেখানে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাতিল হয়েছিল।পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, যদি এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়, তবে এক কোটিরও বেশি মৃত, ভুয়ো এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে। শুভেন্দু বলেন, ‘মৃত ভোটারের নাম বা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকায় থাকা গণতন্ত্রের পক্ষে সমীচীন নয়। একটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্ত করার প্রথম ধাপই হল ভোটার তালিকা সংশোধন করা এবং তাকে ত্রুটিমুক্ত করা।’ ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ থেকে ৩২৯ ধারার কথা উল্লেখ করে শুভেন্দু জানান, নির্বাচন কমিশন একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা, যা বাবাসাহেব আম্বেদকর তৈরি করে গিয়েছেন। তাই কোনও শাসক বা বিরোধী নেতার কথায় নির্বাচন কমিশন চলবে না, কমিশন চলবে সংবিধানের নিয়ম মেনে। নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরকে সঠিক জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। শুভেন্দুর অভিযোগ, কিছু অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বিবাহসূত্রে এ দেশে এসে বাবার নাম পরিবর্তন করে ভোটার তালিকায় থেকে গিয়েছে, তা দূর করা প্রয়োজন।
এ দিন বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘বিহারে সরকার সাহায্য করেছে। রাজনৈতিক দলগুলিও কাজ করেছে। ফলে সেখানে ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে। এখানে বিস্তির্ণ এলাকায় সন্ত্রাস আছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং ধর্মীয় সন্ত্রাস। এখানে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের লোককে লেলিয়ে দেওয়া হয়। জেপি নাড্ডা থেকে শুরু করে খগেন মুর্মু পর্যন্ত। আর সেখানে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সব বিএলও-দের সঙ্গে থাকতে পারবে কি না, এ আশঙ্কা রয়েছে। বিএলও-রা নির্ভয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে, বিহারের মতো এস আই আর করতে পারবে কি না, সেটা আশঙ্কা আছে। আমাদের মুসলিম বুথগুলিতে কর্মী নেই। কোথাও কর্মীরা প্রাণ দিয়ে দিক সেটা চাইব না। তার বাইরেও কী কী করা যায়, সেটা আমরা করব। এখন দেখার বাস্তবে কি ঘটতে চলেছে।’
পাশাপাশি, খগেন মুর্মূর উপর হামলার ঘটনায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উপর ‘চাপ’ তৈরির কৌশল নিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু বলেন, ‘বেঙ্গল ওয়ান্ট অ্যাকশন! এখন সাংবিধানিক ভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু করার নেই। আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্যের সাংসদ এবং বিধায়ক। তাই রাজ্যের মধ্যেই আমাদের ন্যায় আদায় করতে হবে। সেই কারণেই আমরা দাবি করছি, রাজ্যপাল তাঁর দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করুন।’