সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
গঙ্গার বুকে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিলেন লিলুয়ার এক দম্পতি। লঞ্চটি সালকিয়া থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল। মাঝনদীতেই ঘটে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তবে লঞ্চের কর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে খবর, একমাত্র মেয়ের মৃত্যুতে গভীর মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন ওই দম্পতি। সেই কারণেই এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। যদিও লঞ্চের কর্মীদের তৎপরতায় দুজনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির বাড়ি হাওড়ার লিলুয়ার ভট্টনগর এলাকায়। কিডনির অসুখে ভুগে দম্পতির ১২ বছরের একমাত্র সন্তান কিছুদিন আগেই মারা যায়। সেই মৃত্যুশোক ভুলতে না পেরেই মানসিক অবসাদ চেপে বসেছিল দু’জনের মধ্যে। সেখান থেকেই নিজেদের শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। এদিন সকালে দু’জনে হাওড়ার বাঁধাঘাট থেকে কলকাতার আহিরীটোলায় যাওয়ার লঞ্চে উঠেছিলেন।
লঞ্চ মাঝগঙ্গায় যাওয়া মাত্রই সকলকে হতবাক করে দুজনেই ঝাঁপ মারেন। সকাল সাড়ে নাগাদ লঞ্চে যথেষ্ট যাত্রী ছিলেন। সকলের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়ায়। কালবিলম্ব না করে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন বছর ১৮-এর তরুণ কৃষ্ণ পাল। তাঁকে ঝাঁপাতে দেখে লঞ্চের আর দুই কর্মী অর্ঘ্য ঘোষ ও রামকুমার মাইতিও গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। ততক্ষণে বেশ কিছুটা ভেসে গিয়েছেন ওই দম্পতি। তিনজনেই সাঁতরে ওই দম্পতির কাছে পৌঁছন। দম্পতিকে উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাঁধাঘাটে লঞ্চের অন্য কর্মীরা পুলিশকে খবর দেন। মালিপাঁচঘড়া থানা থেকে পুলিশ এসে দম্পতিকে উদ্ধার করে উত্তর হাওড়ার টি এল জয়সোয়াল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ওই দম্পতি লিলুয়ার ভট্টনগরের বাসিন্দা। এদিনই পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের হাতে দম্পতিকে তুলে দেওয়া হয়।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, যে তিনজন ওই দম্পতিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করেছে তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। যেভাবে সাহস ও জীবনের বাজি রেখে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে দু’জনকে তাঁরা বাঁচিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।