সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রায় ঘোষণা ১৮ জানুয়ারি। ওই দিন রায় ঘোষণা করবে শিয়ালদা আদালত। আর জি কর মেডিক্যালে ধর্ষণ-খুনের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ। ১৮ জানুয়ারি দুপুর ২.৩০টে নাগাদ রায় ঘোষণা হবে। আর জি করের ঘটনার পাঁচ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হতে চলেছে। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক ছাত্রী চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এরপর কলকাতা পুলিশ এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করলে সঞ্জয় রায়ের নাম উঠে আসে। মহিলা ডাক্তারকে খুনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলাকালীন এই মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এই মামলায় সন্দীপ ঘোষ এবং প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কিন্তু পরে জামিন দেওয়া হয়েছিল।
আর জি কর ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত ১১ নভেম্বর। বৃহস্পতিবার ঠিক দু’মাসের মাথায় বিচারপর্ব শুরু হয়। আর সেখানেই রায় ঘোষণার দিন নির্দিষ্ট ভাবে জানানো হল। এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-র আইনজীবী, নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা, তাঁদের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। এদিন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন। পাশাপাশি, সিবিআই-এর আইনজীবী সওয়াল করতে ওঠেন। সঞ্জয় রায়কে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এর আগে, রাজ্য সরকারও ফাঁসির পক্ষেই সওয়াল করে। সিবিআই-ও সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষেই সওয়াল করল আদালতে।
আর জি কর মামলায়, ইতিমধ্যেই ৫২ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়। সঞ্জয়ের আইনজীবী নিজেদের তরফে হলফনামা জমা দেন। আজ নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে যদিও তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ উগরে দেন। তদন্ত ঠিক ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিন রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুনানি চলছিল। সেখানেই বিচারক রায় ঘোষণার কথা জানান। আজ আদালতে উপস্থিত ছিল ধৃত সঞ্জয়ও। কলকাতা পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে। আর জি করের ঘটনায় সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। একাধিক তথ্য পেশ করা হয় আদালতে। সর্বোচ্চ সাজার পক্ষে সওয়াল করা হয়। এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা বলে উল্লেখ করেন সিবিআই-এর আইনজীবী। সিবিআই জানিয়েছে যে এই ঘটনার তদন্তে পাওয়া সমস্ত প্রমাণ একই অভিযুক্তের দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তির সঙ্গেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। এই প্রমাণের বরাত দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা ধৃত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছে।
আদালতের বাইরে আজ নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী জানান, সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষ হওয়ার পর ১৮ জানুয়ারি দিনটিকে রায়দানের জন্য ঠিক করেছেন বিচারক। তাঁরা বলেন, “আমরা বিচার চাইতে এসেছি। যে বা যারা যুক্ত, তারা যেন সর্বোচ্চ সাজা পায়। লিখিত আকারে আমাদের আবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের বক্তব্যের পর সিবিআই উত্তর দিয়েছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট এখনও জমা পড়েনি। পুরোপুরি শেষ হয়নি তদন্ত। আরও কেউ যুক্ত থাকলে, তাদের নামও সামনে আসবে বলে আশা করছি। সিবিআই আজ সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে।” সঞ্জয়কে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠছে, তদন্ত নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, তা নিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালত সবদিক খতিয়ে দেখবে বলে আশাবাদী তাঁরা। ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন নির্যাতিতার অভিভাবকরা।
নির্যাতিতার মা বলেন, “একা ওর পক্ষে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা সম্ভব নয়। একটা হাসপাতালের জনবহুল হাসপাতাল। সেখানে কেউ একজন বাইরের এসে গেল হাসপাতালের কেউ জানতে পারল না এটা আমি মনে করি না। আমি মনে করি হাসপাতালের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তারা সবাই সামনে আসবে, প্রকৃত তথ্য সামনে আসবে। যখন সবাই শাস্তি পাবে। তখন আমার মেয়ের আত্মা ও আমার মন শান্তি পাবে।”