সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘ত্রিপুরায় আমাদের পার্টি অফিসে ভাঙচুর হয়েছে। ওখানে যা চলছে…আমাদের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদদের আটকে দিল। প্রিপেইড ট্যাক্সিও নিতে দিল না। বাইকেও যেতে দিচ্ছিল না। আমি বাধ্য হয়ে বলি হেঁটেই যেতে। তারপর ওরা হাঁটতে শুরু করে। তাও যদি যেতে না দেয় আমি বলেছিলাম আমিও যাব। হিম্মত থাকলে আটকে দেখাক।’ ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় এভাবেই কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্যোগ-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উত্তরবঙ্গে থেকে ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে ত্রিপুরায় বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘ত্রিপুরায় আগে অভিষেকের গাড়িও ভাঙা হয়েছিল। দোলা সেন, সুস্মিতা দেবের গাড়িতে হামলা হয়েছিল, তখন ডবল ইঞ্জিন কোথায় ছিল? এরা অশান্তিকে প্রশ্রয় দেয়। আগে নিজের ঘরে তাকান।’
অন্যদিকে আগরতলা বিমানবন্দর থেকে তুমুল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আগরতলায় তৃণমূল পার্টি অফিসে পৌঁছায় তৃনমূল প্রতিনিধি দল। ত্রিপুরায় যেভাবে তৃণমূলের রাজ্য সদর দপ্তরের ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকা নিয়ে বিজেপি নেতা কর্মীরা, নির্বিচারে পুলিশের সামনেই ভাঙচুর চালিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে মমতার নির্দেশে আজ সকালেই আগরতলা বিমানবন্দরে পৌঁছায় কুনাল ঘোষের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের বিশেষ প্রতিনিধি দল। তৃণমূলের এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ, রাজ্যের বনমন্ত্রী ও ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বীরবাহা হাঁসদা, জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং তৃণমূল নেতা সুদীপ রাহা। কিন্তু আগরতলা বিমানবন্দরে নামার পরেই তাঁদের একের পর এক প্রশাসনিক হেনস্থার মুখে পড়তে হয়।
আগরতলা এয়ারপোর্ট থেকে দলীয় দপ্তরের দিকে রওনা দিতে বাধা পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি বেঁধে যায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদের। তাঁরা জানান, আগে থেকে প্রশাসনকে জানিয়েই তাঁরা ত্রিপুরা এসেছেন। কুণাল ঘোষ দাবি করেন, তৃণমূলের প্রতিনিধিদের নিতে যে চারটি গাড়ি এসেছিল, তার তিনটিকেই ভয় দেখিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ত্রিপুরার পুলিশ। রয়েছে একটি মাত্র গাড়ি। একটি গাড়িতে তো এতজনের যাওয়া সম্ভব নয়। এরপর তাঁরা ফের অনুরোধ করেন গাড়ি আসতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এমনই অচলাবস্থা চলতে থাকে। তখন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল বলে, মাত্র ১টি গাড়ি যেহেতু, মালপত্র গাড়িতে রেখে, সবাই মিলে হাঁটব। তৃণমূলের প্রতিনিধিদের এয়ারপোর্টের বাইরেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না, অভিযোগ করে কুণাল ঘোষ, সুস্মিতা দেবরা বসে পড়েন এয়ারপোর্টের বাইরের মাটিতেই।
শেষে কোনও ক্রমে আগরতলার সদর দফতরে পৌঁছয় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। আর তারপরই সাংবাদিক বৈঠক করেন তাঁরা। কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক থেকে এ দিন পরিষ্কার জানান কেন তাঁরা ত্রিপুরায় এসেছেন। কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মঙ্গলবার আগরতলায় পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়েছে। সেই কারণে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাঠিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরা থেকে বাংলায় বিজেপি নেতারা অবাধে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু ত্রিপুরায় আসতে গেলে আমাদের হুমকির মুখে পড়তে হয়। গাড়ি দেওয়া হয় না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলা হয়।সুদীপের মাথা ফেটে গিয়েছিল। এই সব তো দক্ষিণী সিনেমায় হয়। কিন্তু এগুলো ত্রিপুরাতেও হয়। এবার তো গাড়ির চালককে বের করে দিয়েছে। টাকা দিয়ে দিয়েছি, তাও প্রিপেড ট্যাক্সি নিতে দিচ্ছে না। যখন হেঁটে যাচ্ছি, তখন পুলিশ আটকায়। আমরা বলছি, হেঁটেই তো যাব। তাও আটকে দিচ্ছে।’

খগেন মুর্মুর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘নাগরাকাটায় বিজেপি যেটা বলছে তাঁদের সাংসদ-বিধায়কের উপর হামলা হয়েছে। আমরা ওই ঘটনার নিন্দা করেছি। এমনকী মুখ্য়মন্ত্রী নিন্দা করেছেন, উনি দেখতেও গিয়েছেন। এইভাবে নেতার গায়ে হাত দিয়ে ক্ষোভের প্রকাশ হতে পারে না।’ পরবর্তীতে কেন্দ্রকে আবারও একহাত নিয়ে কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, ‘কিন্তু এই ক্ষোভটা কেন হচ্ছে?ত্রিপুরার মানুষকে বোঝাচ্ছি, বাংলার মানুষের ক্ষোভ কোথায়। এই বিজেপি নেতারা আবাসের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে, একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। সেটা গর্ব করে বলছে আটকে দিয়েছি। যে গরিব মানুষগুলো এতদিন কাজ করল তাঁরা টাকা পেল না। এরপর বাংলা বললে, বলছে বাংলাদেশে পাঠাব। আর বন্যায় দুর্গতদের দেখতে গেছে, সেখানে ত্রাণ নিয়ে যায়নি। ফটোশুট করতে গিয়েছিলেন। সেই কারণেই মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে এটা আমরা সমর্থন করি না।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় মোদিজি, বাংলার গণতন্ত্র নিয়ে লেকচার দেওয়ার আগে একবার আপনাদের ডাবল ইঞ্জিন ত্রিপুরায় গণতন্ত্র আছে কিনা খোঁজ নিয়েছেন কি?’