সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
উৎসবের মরশুম শেষ হতে না হতেই বাংলায় ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন প্রক্রিয়া শুরুর কাজ শুরু করে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল। কমিশনের নজরে তিন জেলা-পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া। কোলাঘাট অডিটোরিয়ামে তিন জেলার আধিকারিক ও ৫০০ বিএলও-কে নিয়ে বৈঠক করেন ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী।
এসআইআর শেষ হওয়ার তিন মাস পরেই রাজ্যে ভোট। তিন মাস পরই হবে বিধানসভা নির্বাচন। কোলাঘাটে তিন জেলার অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের টিম। বুধবারই খানিকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কালীপুজোর পরই রাজ্যে এসআইআর হবে। বুধবার দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। সেখানে তাঁরা বারবার ১১-১৫ অক্টোবর এই ডেডলাইনের কথা বলছিলেন। যাবতীয় বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কমিশন চাইছে, বিজ্ঞপ্তির আগেই এনুমারেশন ফর্ম ছাপিয়ে রাখা হোক। সেই বিষয়টি বুধবারই স্পষ্ট করে দিয়েছে কমিশন। তাতে যাতে বিহারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কারণ বিহারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এনুমারেশন ফর্ম ছাপানোর কাজ শুরু হয়। তাতে সমস্যায় পড়তে হয় কমিশনকে। যাবতীয় কাজ ১১-১৫ অক্টোবর শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাতেই খানিকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কালীপুজোর পরই রাজ্যে এসআইআর-এর সম্ভাবনা প্রবল।
মঙ্গলবার রাতেই দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছেছে কমিশনের উচ্চপর্যায়ের দল। রয়েছেন উপ-নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, তথ্যপ্রযুক্তি শাখার ডিরেক্টর জেনারেল সীমা খান্না, কমিশনের সচিব এসবি যোশী এবং উপ-সচিব অভিনব আগরওয়াল। বুধবার সকালে তাঁদের নেতৃত্বেই হয় রাজ্যের জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক। সেখানে কমিশনের তরফে সাফ জানানো হয়েছিল, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে সমস্ত প্রস্তুতি। সময়মতো বিজ্ঞপ্তি জারি ও ফর্ম বিতরণে যেন কোনও গাফিলতি না হয়।
এদিন কোলাঘাটের বৈঠকেও জেলার প্রস্তুতির খতিয়ান খোঁজ খবর নেন কমিশনের কর্তারা। কোথায় কতটা কাজ এগিয়েছে, সরেজমিনে সেই ছবি দেখা হয়। স্পষ্ট জানানো হয়েছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই অন্তত ৩০ শতাংশ ফর্ম ছাপানোর কাজ শেষ করতে হবে। প্রতিটি জেলার নিজস্ব পরিকাঠামো ব্যবহার করে সেই ছাপার কাজ করতে হবে। বিহারের মতো এক জায়গা থেকে ফর্ম পাঠানোর পথে হাঁটবে না কমিশন। রাজ্যে এই মুহূর্তে প্রায় ৭.৬৫ কোটি ভোটার। তাঁদের জন্য ছাপাতে হবে অন্তত ১৫ কোটিরও বেশি আবেদনপত্র। প্রতিটি ভোটারের জন্য দু’টি করে ফর্ম-একটি ভোটারের হাতে থাকবে, অন্যটি সংগ্রহ করে আনবেন বিএলও। দিল্লি থেকে সফট কপি পাঠানোর পরই ফর্ম ছাপার কাজ শুরু হবে। তার পর সেই ফর্ম বিলি করা হবে বুথ লেভেল অফিসারদের হাতে। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেগুলি পৌঁছে দেবেন তাঁরাই।
অন্যদিকে, আজ ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে কোলাঘাটে এসআইআর নিয়ে বৈঠকের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা ঢোকার মুখেই তাদের ঘিরে বিক্ষোভ সনাতনী ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের। এস আই আর নিয়ে নির্বাচন কমিশন পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের তিন জেলার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন। বেলা এগারোটার কিছু আগেই কমিশনের প্রতিনিধিরা চলে আসেন। এদিন জাতীয় নির্বাচন আধিকারিকরা কোলাঘাট অডিটোরিয়ামে ঢোকার মুখেই তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান সনাতনী ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট। সনাতনী ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের সদস্যরা মূল গেট দিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। শেষে তাঁরা রাস্তার ধারেই বিক্ষোভ দেখান।
সনাতনী ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের সদস্য বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন যে এস আই আর করছে, তা মানতে পারছি না, কেননা অনেকের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, যাঁরা সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিক, সে ভোটার হিসেবে লিস্ট করতে পারছে না। আমরা সেখানে ভারতীয় নাগরিক হয়ে সেই জিনিসকে মান্যতা দেব, এটা হয় না। আমরা এস আই আর মানছি না।’