সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
বাঙালি বাংলার মেয়েকেই চায়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার এই স্লোগান বাজিমাত করেছিল ভোট বাক্সে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে যখন এক দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রায় সমস্ত সদস্য এবং দেশের প্রত্যেকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বাংলায় প্রচারের ঝড় তুলেছিলেন, সেই সময় বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে মমতাকে ভোট দিয়েছিল বাংলার মানুষ।
প্রসঙ্গত গত অগাস্ট মাসেই মমতা ক্যামেরার সামনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রাজ্যটার পরিচিতি নষ্ট হয়ে যাবে। বাংলায় কথা বলার লোকও খুঁজে পাবেন না। ফুটপাথ দখল থেকে সরকারি জমি দখল নিয়ে, পুলিশ-প্রশাসন এবং দলীয় নেতা ও কাউন্সিলরদের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করতে গিয়ে এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের ঘাড়ের ওপরে আমি দেখছি যত বোঝা, এরপরে তো রাজ্যটার পরিচিতি নষ্ট হয়ে যাবে, বাংলায় কথা বলার লোকও খুঁজে পাবেন না।’
কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে আরো প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও বাংলার মেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে থাকা সত্ত্বেও বাংলার মানুষ বিপন্ন বোধ করছে বহিরাগত অবাঙালি দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে। এবং আরো স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে বাংলায় সাম্প্রতিককালে অধিকাংশ বড় অপরাধের পিছনে রয়েছে প্রতিবেশী বিহার থেকে আসা দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব।
সিপিএমের পক্ষ থেকে তো বটেই তৃণমূলের পক্ষ থেকেও এবারে তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানানো শুরু হয়েছে ভিন রাজ্য থেকে বিশেষ করে বিহার এবং উত্তর প্রদেশ থেকে আসা দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সক্রিয় হোক কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশ।
থেকে একই দাবি তুলেছেন কলকাতার মেয়র তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ক্ষমতাবান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজেও। দলীয় কাউন্সিলরের উপরে এই হামলার ঘটনায় পুলিশের উপরেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম৷ তিনি বলেন, “এনাফ ইজ এনাফ৷ উত্তর প্রদেশ, বিহার, আহমেদাবাদের কালচার এখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷ আমাদের কাউন্সিলর খুন হলে তাঁর পরিবার, আমার দল ক্ষতিগ্রস্ত হত৷ পুলিশকে বলব অ্যাক্ট নাউ৷ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বার বার বলার পরেও কী করে বাইরে থেকে অস্ত্র, দুষ্কৃতী বাংলায় ঢুকছে? ইন্টেলিজেন্স কোথায়? আমাদের রাজ্যটা অপরাধীদের জন্য নয়৷ বলছে মুঙ্গের থেকে অস্ত্র আসছে৷ অস্ত্র যাতে না আসে সেটা তো পুলিশকে দেখতে হবে৷”
গত ৯ অগাস্ট আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় বাংলা জুড়ে তো বটেই সম্প্রতি গতিতে সবথেকে বড় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল দেশজুড়ে। সেই ঘটনায় প্রথমে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রাই। পরে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআই তদন্ত নেমেও চার্জ শেষ জমা দিয়েছে সেই সঞ্জয় রাইয়ের বিরুদ্ধেই। তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হলো আরজিকর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় জন্মসূত্রে বিহারের বাসিন্দা।
গত শুক্রবার রাতে কসবা এলাকায় তৃণমূল কাউন্সিলার সুশান্ত ঘোষের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে তাকে হত্যার চেষ্টায় জনসাধারণের হাতে ধরা পড়ে যায় যুবরাজ সিং নামে এক সুপারি কিলার। প্রথমে তাকে নাবালক বলে অনুমান করা হলেও আধার কার্ড দেখে জানা গিয়েছে আদতে বিহারের বাসিন্দা এই দুষ্কৃতি নাবালক নয়।
আর জি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই হাওড়ায় হসপিটালেও এক রোগিনীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে প্রেস কনফারেন্স করে নিজেই জানিয়েছিলেন সেই ঘটনাতেও অভিযুক্ত বিহারের বাসিন্দা।
এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের তরফে বিশেষভাবে নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। কারণ অভিযোগ উঠেছে বাংলায় যেহেতু পুলিশের নজরদারি ভীষণ রকমের বেশি। তাই এখানে অপরাধমূলক কাজকর্ম সেই ভাবে করার সুযোগ পায় না এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু প্রতিবেশী বিহার থেকে অত্যন্ত কম টাকায় খুন যখন থেকে শুরু করে বোমাবাজির সুপারি দেওয়ার জন্য অসংখ্য দুষ্কৃতিকে পাওয়া খুব সহজ হয়ে উঠেছে মাফিয়াচক্র গুলির কাছে।