সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
লখনউ, উত্তরপ্রদেশ: ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে ফের নৃশংস ধর্ষণ! বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে একাদশ শ্রেণির দলিত ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতারা।
শনিবার দুপুরে ঘটে ভয়ঙ্কর এই ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ বছরের ওই কিশোরী অসুস্থ দিদিকে দেখতে যাচ্ছিল এক সহপাঠীর মোটরসাইকেলে। পথে বনতারার আমবাগানের কাছে পাঁচ দুষ্কৃতী তাদের পথ আটকায়। সহপাঠীকে বেধড়ক মারধর করে একাধিক দুষ্কৃতী মেয়েটিকে টেনে নিয়ে যায় বাগানের ভেতরে। তারপর শুরু হয় নারকীয় অত্যাচার—পাঁচজন মিলে গণধর্ষণ করে ওই কিশোরীকে।
পুলিশ আধিকারিক বিকাশ কুমার পান্ডে জানিয়েছেন, “মেয়েটিকে ও তার সঙ্গীকে রাস্তার পাশে আটকানো হয়। সহপাঠী পালিয়ে গিয়ে পরে ফোনে নির্যাতিতার জামাইবাবুকে খবর দেয়। তিনিই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।” মেয়েটির মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মূল অভিযুক্তরা এখনও পলাতক।
তবে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াই হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় অভিযুক্তরা, পাল্টা গুলিতে আহত হয় এক দুষ্কৃতী—তার নাম ললিত কাশ্যপ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি দেশি পিস্তল।
—
বিজেপি সরকারের নীরবতা নিয়ে সরব অখিলেশ যাদব
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই সমাজবাদী পার্টির নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন,
> “উত্তরপ্রদেশ এখন ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা বলে কিছুই নেই। সরকার সত্য গোপন করছে, প্রশাসন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
অখিলেশের অভিযোগ, রাজ্যে প্রতিদিন নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনের ঘটনা ঘটছে—তবুও সরকার ও পুলিশ নির্বিকার। “পথে ঘাটে মেয়েদের উপর পিশাচের মতো হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে কিছু মানুষ, কারণ প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ,”—বলেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, “এই সরকার কেবল বাহুবলের প্রদর্শন জানে, কিন্তু মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। এমন ঘটনার পর যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগ করা উচিত।”
—
মায়াবতীর তীব্র প্রতিক্রিয়া
বহুজন সমাজ পার্টি সুপ্রিমো মায়াবতীও এই ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন,
> “বিজেপি শাসনে উত্তরপ্রদেশে প্রতিদিন ধর্ষণ, হেনস্থা ও খুনের ঘটনা ঘটছে। প্রশাসন ব্যর্থ, আর সরকার চুপ করে বসে আছে।”
তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকেও আক্রমণ করে বলেন, “ডাবল ইঞ্জিন সরকার শুধু নামেই কাজ করছে। বাস্তবে নারীদের নিরাপত্তা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।”
—
প্রশ্নের মুখে যোগী প্রশাসন
উত্তরপ্রদেশে গত কয়েক বছরে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা রাজ্য প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। হাথরাস, উনাও, এবং এখন লখনউ—প্রতিটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উত্তরপ্রদেশ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অপরাধীরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কারণ তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় রয়েছে।”
বর্তমানে বনতারার এই গণধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এক অভিযুক্ত আহত অবস্থায় ধরা পড়লেও অন্যরা এখনও অধরা। রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, আর বিরোধীরা একযোগে প্রশ্ন তুলছে—“যোগী রাজ্যে মেয়েরা আদৌ নিরাপদ তো?”