সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
দীর্ঘ টালবাহানার শেষে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠন হলো পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, মানিক ভট্টাচার্য-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই মাস্টারমাইন্ড। এই দাবি করেছে ইডি সিবিআই দু’পক্ষই। আজ সোমবার তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে ইডির মামলায় চার্জ গঠন হল। আজ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চার্জ গঠন করা হয় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় হাজির ছিলেন ইডি’র বিশেষ আদালতে। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ তাঁকে শোনান। তখনই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনতে চান বিচারক। পার্থ বিচারককে বলেন, ‘এই সমস্ত অভিযোগ কাল্পনিক। সবই মিথ্যা। আর সেসব আমি আপনার সামনেই প্রমাণও করব।’ শুনানি শেষে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘চার্জ গঠন করে ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে ইডি। প্রমাণ ছাড়াই এই চার্জ গঠন হয়েছে।’ এটা শুনে ক্ষুব্ধ হন বিচারক। বিচারকের কথায়, ‘এটা তো সরাসরি আদালত অবমাননার সমতুল অভিযোগ।’ এটা শুনেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাফাই, ‘আপনার উপর আমার আস্থা আছে।’ তখন বিচারকের কড়া প্রশ্ন,’আপনি কী করে ভাবলেন প্রমাণ ছাড়া আপনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হল?’
হাসপাতাল থেকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-কে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত তিনি। আজ, সোমবার অসুস্থতার রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা। অসুস্থতার কারণে বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারি আদালতে হাজির করা যায়নি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। তাই বিলম্বিত হয়েছিল চার্জগঠনের প্রক্রিয়া। আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচার ভবনে হাজির করা হয় তাঁকে। বিচারক সুজয়কৃষ্ণকে তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি বলেন, ‘ভাল আছি। আমি নির্দোষ। আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ করা হয়েছে?’ আজ কালীঘাটের কাকু সম্পর্কে ইডির আইনজীবী বিচারককে জানান, কালীঘাটের কাকু এখন হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তাঁর জন্য মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। কালীঘাটের কাকুর বুকে পেসমেকার বসানো আছে।
আজ চার্জ গঠন হয় অয়ন শীল, মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও। চার্জ গঠনের সময় বিচারকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি মানিক ভট্টাচার্যের। চুপ করে বসুন, না হলে এজলাস থেকে বের করে দেব, ধমক বিচারকের। মানিক ভট্টাচার্যকে ধমক দেন বিচারক। বিচারক বলেন, “আপনি প্রাথমিক বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থেকে কোটি কোটি টাকা কমিয়েছেন। আপনি অন্যতম অভিযুক্ত। আপনি অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন। উচ্চপদে থেকে চাকরি দিয়েছেন অবৈধভাবে।”
সামনে মানিককে রেখে বিচারক আরও বলেন, “প্রাথমিক বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদের অপব্যবহার করেছেন আপনি। তাপস মণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত থেকে অবৈধভাবে চাকরি দিয়েছেন মোটা টাকার বিনিময়ে। কোভিডের সময়ে অনলাইন ক্লাসের নামে টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা গিয়েছে আপনার ছেলের সংস্থায়। আপনার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র আপনার সঙ্গে রোজ মোবাইলে যোগাযোগ রাখতেন। আপনার অফিসে যেতেন। চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা দিতেন। আপনি আপনার পদের অপব্যবহার করে মানি লন্ডারিং করেছেন।”
এরপর বিচারক প্রশ্ন করেন, “আপনি কি দোষী না দোষী নন?” উত্তরে মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি দোষ মানব তখনই, যখন মামলা থেকে অব্যাহতির যে আবেদন করেছি, তার অর্ডার কপি পাব।” এরপর বিচারক আবারও প্রশ্ন করেন, “আপনি দোষ স্বীকার করবেন, না কি করবেন না?” মানিকের জবাব, “স্যার আমার বক্তব্য রেকর্ড করা হোক।”
এ কথা শুনে বিচারক বলেন, “আমি এটা ধরলাম যে আপনি দোষ স্বীকার করলেন না। এই পর্যায়ে অন্য কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না।” আবারও মানিক প্রশ্ন করেন, “আমি কিছু বলতে পারব না?” বিচারকের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করায় ক্ষুব্ধ হন বিচারক। তিনি বলেন, “মানিকবাবু বাইরে গিয়ে বসুন নাহলে বাইরে বের করতে বাধ্য হব।”
এরপর কথা বলেন মানিকের আইনজীবী গোপাল হালদার। তিনি বলেন, “আপনি শুনতে চাইছেন না। আমাদের কথা শুনুন। এটা তো ডিকটেশন হয়ে যাচ্ছে।” তবে তারপরও কিছু শুনতে চাননি বিচারক।