সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
”মুর্শিদাবাদের ওপারে বাংলার সীমান্ত রয়েছে। সেই সীমান্ত বিএসএফ দেখুক। আমাদের উপর অত্যাচার হলে আমরা দেখব।” এভাবেই মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে সীমান্তে শান্তিরক্ষার জন্য দায়িত্ব নিতে বিএসএফকে আবেদন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই সাধারণ মানুষকে সতর্কও করেন মমতা। তিনি বলেন, ”আমি স্থানীয় পুলিশকে বলব, তাঁরা যেন মাইকে প্রচার করে ফিরে আসেন।” আইন হাতে তুলে নিতেও বারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার মুর্শিদাবাদের লালবাগে ‘নবাব বাহাদুর ইনস্টিটিউশন’-এ ছিল সরকারি পরিষেবা প্রদানের কর্মসূচি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নবাবের পরিবারের সদস্যেরা। ওই কর্মসূচিতে জেলার মানুষের হাতে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তার পরেই সীমান্তে শান্তিরক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষকে বার্তা দেন তিনি।
এ দিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুর্শিদাবাদ শান্ত জায়গা। অশান্তির ইতিহাস নেই। কাটরা মসজিদের ঘটনা আজও ভুলতে পারি না। কয়েকদিন আগে বেলডাঙায় পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তবে তা উভয় সম্প্রদায় মিলে ভেস্তে দিয়েছে। পুলিশ ভাল ভূমিকা নিয়েছে। সারারাত জেগে আমি পাহারা দিয়েছি যাতে কোনও রকম অত্যাচার না হয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ পরিবার। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। যারা করে তাদের ঘৃণা করি। মুর্শিদাবাদে মেজরিটি মুসলিম। আপনাদের উচিত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষা করা।” অর্থাৎ আরও একবার মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার।
সোমবার সাধারণ মানুষের পরিষেবা ও ন্যায্য অধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুয়ারে সরকারে ৩৭টি প্রকল্পের সুবিধা মিলবে। যারা এখনো সুযোগ পাননি তাদের অনুরোধ করব, আপনারা ২৪ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন জমা দিন। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেগুলো ন্যায্য প্রমাণিত হবে, তা তাদের দিয়ে দেওয়া হবে। ন্যায্য অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দেন সাধারণ মানুষকে। “দুয়ারে সরকার পরিষেবার জন্য কাউকে এক পয়সাও দেবেন না। কেউ যদি টাকা চায়, থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাবেন। থানা অভিযোগ নিতে না চাইলে সরাসরি ফোন করে অভিযোগ করবেন”, স্পষ্ট জানান তিনি।
সোমবার, লালবাগের পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠান থেকে একথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ৫০২কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বেশি টাকার বেশী প্রকল্পের উদ্বোধন। ৬২ হাজার মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে যায় মঞ্চ থেকে। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, বাংলা বিদ্বেষ সহ একাধিক ইস্যুতে সোচ্চার হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মানুষকে ভাতে মারার জন্য নানা কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র চলে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম না মানায় রাজ্যই যে বিকল্প পথে উন্নয়নও কর্মসংস্থানের দিশা দেখাচ্ছে তাও উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে রাজ্যের চালু করা কর্মশ্রী প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি। ৫০ দিনের সেই প্রকল্পে মুর্শিদাবাদ জেলায় ২ লক্ষ ষাট হাজার মানুষ কাজ পেয়েছে। গঙ্গার ভাঙনরোধে কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় রাজ্য ভাঙনরোধে ৪00কোটি টাকা ব্যয় করেছে বলেও স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি কেন্দ্রকে নিশানা করে বলেন, ”যারা আন্দোলন করেছিলেন ১০০ দিনের টাকা পায়নি বলে তাদের খোঁজে দিল্লি পুলিশ এখানে এসেছিল। নোটিশ পাঠাতে এসেছিল। আমরা বলেছি নোটিশ আমাদের দাও আমরা দেখেছি দেখব। আমাদের লোকেরা আন্দোলন করলে ১৪৪ ধারা। আর তোমরা গুন্ডামি করলে কত ধারা? আমাদের এমএলএ এমপিদের কথা শোনেনি চুনোপুটি মিনিস্টার। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পর গরিব মানুষরা যাবে কোথায়? তাই আমরা কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছি। ৫০ দিন কাজ করার জন্য শুধু মুর্শিদাবাদ জেলায় ২ লক্ষ্য ৬০ হাজার মানুষ কাজ পেয়েছে।”
“বাবলার অসমাপ্ত কাজ চৈতালি করবে” মমতা
মুর্শিদাবাদ সফরের পরে মালদহে পৌঁছেই নিহত তৃণমূল কাউন্সিলর বাবলা সরকারের বাড়িতে দেখা করতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছুক্ষণ একান্তে চৈতালি সরকারের সাথে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বাইরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন তিনি সঙ্গে কাউকে নিয়ে আসেননি।
মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘আমি একা এসেছি। এই কেসে আমি বলতে পারি যে যত বড়ই হোক না স্ট্রং অ্য়াকশন নেওয়া হবে। কতগুলো কথা কানে এসেছে। ডিজি, এসপিকে বলেছি। বাবলার অসম্পূর্ণ কাজ চৈতালি করবে। বাবলা আমার চিরকালের পরিচিত।…ও আমাদের নিরলস কর্মী ছিল। মালদার রাজনীতি আমি একটা বুঝি না। এমএলএ এমপি পাই না। কিন্তু কর্পোরেশন ভোটে কেউ কেউ জিতে যাই। দুর্ভাগ্য এটা। এর মধ্য়ে কী রহস্য রয়েছে। রহস্যটা জানি। অনেকরকম খেলা চলে। এই খেলা চললে তো মানুষের পক্ষে খারাপ হবে। জনপ্রিয়তা প্রথম থেকে ছিল। এমপি ইলেকশনে দুটো আসনে হারলাম। কাউন্সিলর ইলেকশনে দেখলাম জিতে গেল। আমি তো চাইবই আমাদের লোক জিতুক। কিন্তু রহস্যটা কী। রহস্যটা ভেদ করতে হবে।’
দুলাল সরকারের স্ত্রী বলেন, মুখ্য়মন্ত্রী তিনি অবশ্যই। তিনি তার আগে আমাদের দিদি। তিনি বাবলাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আমাকেও ভীষন স্নেহ করেন। এটা আমাদের কাছে বড় আশীর্বাদ। বাবলার যে ঘটনাটা হয়েছে আপনারা জানেন প্রথমে যখন ঘটনাটা ঘটে তখন যেমন তিনি রিঅ্য়াক্ট করেছিলেন আজকে তিনি তার থেকেও বেশি দুখী। সেই দুঃখের কথা তিনি শেয়ার করলেন। তারপর আলাপ আলোচনা হল।