সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“আমি সকলের কাছে অনুরোধ করছি, শান্তি বজায় রাখুন। আমরা সব ধরনের চেষ্টা করছি। গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কানও দেবেন না। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। কোনও ধরনের হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের সব কর্মীরা রাস্তায় আছেন। প্ররোচনায় পা দেবেন না, মানুষকে এটা বুঝতে হবে। গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থা নেব আমরা।” কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করা ওয়াকফ সংশোধনী বিল এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নেমে মুর্শিদাবাদসহ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় যে আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এভাবেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার বিকেল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। জঙ্গিপুরের ঘটনার পর ১৬৩ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদে নামে স্থানীয়রা। তারা ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের বাধায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান ডাকবাংলো ও রতনপুর এলাকায় পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের অফিস। জ্বালানো হয় সরকারি-বেসরকারি বাস। বাদ যায়নি অ্যাম্বুল্যান্সও। অভিযোগ, হামলা চালানো হয় স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, সাংসদ খলিরুল রহমানের বাড়িতেও। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চলে। অভিযোগ বোমাবাজিরও। আক্রান্ত হন ফরাক্কার এসডিপিও। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় বিএসএফ। শনিবার সকাল থেকে ধুলিয়ান এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএসএফও নজরদারি চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদে মেয়েদের সংখ্যা পৌঁছেছে তিন। গোটা বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনো গুজব না ছড়ায় এবং অশান্তি বৃদ্ধি না পেতে পারে তার জন্য সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা।
মুর্শিদাবাদের ওয়াকফ অশান্তি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেন, “ওয়াকফ সংক্রান্ত অশান্তিতে গ্রেফতারি বেড়ে ১১৮। কোনও গুণ্ডামি বরদাস্ত নয়। গুজবে কান দেবেন না। মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। যারা বদমায়েশি করছে, তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। হনুমান জয়ন্তী আছে আজ। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করছি, শান্তি বজায় রাখুন। আমরা সব ধরনের চেষ্টা করছি। গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কানও দেবেন না। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। কোনও ধরনের হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের সব কর্মীরা রাস্তায় আছেন। প্ররোচনায় পা দেবেন না, মানুষকে এটা বুঝতে হবে। গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থা নেব আমরা। তবে মানুষকে বাস্তবটা বুঝতে হবে। আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছি। আমরাও মানুষের সহযোগিতা চাই। অশান্তি থামাতে আমরা সব ধরনের তৎপরতা নিচ্ছি। কোনও ঘটনা ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নেবই।”
জাভেদ শামিম যদিও বলছেন, সুতিতে সুজার মোড়, সামশেরগঞ্জে ডাক বাংলো মোড়ের অশান্তি ভয়ানক চেহারা নেয়। উন্মত্ত জনতাকে বাগে আনতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয়। আর তখনই গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, “সুতিতে সুজার মোড়, সামশেরগঞ্জে ডাক বাংলো মোড়ে অশান্তি হয়েছে। রাস্তা অবরোধ হয়, পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তারপরই পুলিশের উপর আক্রমণ করে। পুলিশ অনেকক্ষণ থেকে সংযত ছিল। মিনিমাম থেকে ম্যাক্সিমাম ফোর্স প্রয়োগ করা হয়। লাঠি, গ্যাস সবরকম চালানো হয়। কিন্তু, জনতা আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “পাবলিক বাস থেকে, সরকারি সম্পত্তি সবকিছুতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিন ঘণ্টা এরকম চলার পরে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সুজার মোড়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে চার রাউন্ড ফায়ারিং করে। তার মধ্যে ২ জনের আহত হওয়ার আমাদের কাছে খবর আছে। তাঁরা হাসপাতালে আছেন। ভাল আছেন এখন।”

মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলার স্পর্শকাতর এলাকায় অশান্তি ছড়িয়েছে। চলেছে গোলাগুলি। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২ জনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এসবের জেরে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা অশান্তি দমনে সক্রিয়। রাজ্য পুলিশের তরফে ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) বারবার রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, শান্তি বজায় রাখুন, গুজব ছড়াবেন না। সোশাল মিডিয়ায় একই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বারবার গুজবে কান না দেওয়ার কথা বলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও। একই সুর জাভেদ শামিমের গলাতেও। বলছেন, “ভয়ঙ্করভাবে গুজব ছড়াতে থাকে। ভুল বোঝানো হচ্ছে। দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধীরাই এটা করছেন।”