সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
কথা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন করলেন কালীঘাট স্কাইওয়াক। এদিন স্কাইওয়াকের পাশাপাশি হকার্স কর্নারের উদ্ধোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে দক্ষিণেশ্বরে রানি রাসমণি স্কাইওয়াক তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর দক্ষিণেশ্বরের আদলে কালীঘাটের স্কাইওয়াক তৈরির জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। এসপি মুখার্জি রোড থেকে কালীঘাট টেম্পল রোড পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশো মিটার লম্বা একটি স্কাইওয়াক তৈরির বরাতও দেওয়া হয়। পয়লা বৈশাখের উপহারস্বরূপ কালীঘাটে আগত পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে নতুন স্কাইওয়াকের দরজা।
মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মালা রায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, শিল্পপতি সৃঞ্জয় বোস, নির্মল ঘোষ, দেবাশিস কুমার, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, মেহুল মোহাঙ্কা, জিৎ গাঙ্গুলি, অদিতি মুন্সি, জুন মালিয়া-সহ অন্যান্যরা। কালীঘাটের উন্নয়নের স্বার্থে যখন এই স্কাইওয়াকের পরিকল্পনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী সেইসময় হকারদের একাংশের মনে আশঙ্কা তৈরি হয় যে তাঁদের পেটে টান পড়তে পারে। সংকট কাটাতে হাল ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
কাজের সঙ্গে যুক্ত সকলকে মাথা খাটিয়ে উপায় বের করার পরামর্শ দেন। তারপরই হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তারা যখন ভাবতে পারছে না এই হকারদের কোথায় নিয়ে গিয়ে বসাব? তাহলে কি তাঁদের রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যাবে? আমি বললাম না। বুদ্ধি খরচ করো। এক বছরের ব্যাপার তো। স্কাইওয়াক বানাতে যতদিন সময় লাগে ওদের হাজরা পার্কে ব্যবস্থা করে দাও। ওখানে টেম্পোরারি বসুক। যাতে ওদের বিক্রিবাটা বন্ধ না হয়।”
সোমবার সন্ধ্যায় কালীঘাটের সাড়ে চারশো মিটার দীর্ঘ স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করলেন তিনি। উদ্বোধনের আগেই আবেগপ্রবণ পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। কালীঘাট মন্দিরে তাঁর ছোটবেলার অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেই স্মৃতি ও স্কাইওয়াক নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আবেগ শেয়ার করেছেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, ৫১ টি পবিত্র শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম কালীঘাটের কালীমন্দির। তাঁর এবং অগণিত ভক্তদের জন্য কালীঘাট মন্দির একটি ঐশ্বরিক তাৎপর্য ধারণ করে। ছোটো বেলায় প্রতিবছর মায়ের হাত ধরে মন্দিরে যেতেন প্রার্থনা জানাতে। ছোটোবেলার সেই সকল স্মৃতি তাঁর কাছে অত্যন্ত পবিত্র। বর্তমানে মানুষকে অত্যাধুনিক এই স্কাইওয়াক দিতে পেরে তিনি খুশি। স্কাইওয়াকটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটিকে রাস্তা এবং মেট্রোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্কাইওয়াকটি সাধারণ মানুষকে তথা তীর্থযাত্রীদের, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য অনেক বেশি সুবিধা দেবে। তাঁদের অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করবে। মা কালীকে প্রণাম জানিয়ে তাঁর আবেদন সকলের সঙ্গে থাকুন। আশীর্বাদ করুন সকলকে।
প্রসঙ্গত, কালীঘাট স্কাইওয়াক নির্মাণে প্রাথমিক বাজেট ছিল ৭৭ কোটি টাকা। তবে কাজের বিলম্বের কারণে খরচ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৯০ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল। প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১০ মিটার চওড়া এই স্কাইওয়াকটি পুণ্যার্থীদের মন্দিরে পৌঁছোনোর পথ সহজ করবে।

অন্যদিকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গায় ওয়াকফ সংক্রান্ত অশান্তির প্রেক্ষিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার। অন্য অনুষ্ঠানে গেলে আমার পদবি পাল্টে দেওয়া হয়। আমি যে কোনও ধর্মের পাশে দাঁড়াই। শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। তবে আইন কখনও হাতে তুলে নেবেন না। আইন রক্ষার জন্য আইনের রক্ষকরা আছে। আইনের ভক্ষক হওয়ার কী দরকার? কারও কথায় প্ররোচিত হবেন না। শান্তি বজায় রাখুন।”