শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের গোটা এসএসসি প্যানেল বাতিল করে দেওয়ার পর থেকে চাকরিহারারা যে আন্দোলন চালাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সল্টলেকের বিকাশ ভবন চত্বর। পুলিশের সঙ্গে চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ব্যাপক খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়।
এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে এবং তা নিয়ে এবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই বিকাশ ভবনের সামনে উত্তেজনা ছড়ায়। চাকরি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন। সময় যত গড়ায়, ততই বাড়ে উত্তেজনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
অভিযোগ, পুলিশের পক্ষ থেকে সমানে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের উপরে লাঠিচার্জ করা হয়, মারধর এবং গলাধাক্কাও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। এই পুলিশি মারে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী গুরুতর চোট পেয়েছেন বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এই সংঘর্ষে একজন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন বলে খবর।
বিকাশ ভবনে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের এই সংঘর্ষের ঘটনার জল এবার আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। পুলিশের অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়ে ইমেলের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী রাজনীল মুখোপাধ্যায়। তিনি বিধাননগর কমিশনারেটের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানিয়েছেন।
তাদের সঙ্গে যে ‘নির্মম অত্যাচার’ চলছে সেই কথা বলে, রাজ্যের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশেষ করে বিরোধী দলনেতাকে পাশে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছে বিক্ষোভরত চাকরিহারারা। আন্দোলনস্থল থেকেই সাংবাদিকদের চাকরিহারা বিক্ষোভকারী সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘যৌথ সিদ্ধান্তে আমরা সর্বস্তরের মানুষ, সব দলকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের আর্জি, আপনারা পাশে এসে দাঁড়ান। আমাদের চাকরি ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। আমরা কাউকে গো-ব্যাক দেব না। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল যারাই আসবেন, তারা নিজেদের আদর্শ, দলীয় পতাকা ছাড়া আসুন।’ এরপরেই তাঁর সংযোজন, ‘আমরা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে এই অবস্থায় সাদর চিত্তে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত আমাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই নেওয়া। চাকরি ফেরানো থেকে শুরু করে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই প্রতি পর্বে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এরপরেই চাকরিহারাদের মাঝে গেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় চাকরিহারাদের মাঝে গেলেও শুভেন্দু অধিকারী কোনও পতাকা নিয়ে যাননি। তিনি মঞ্চেও ওঠেননি। মঞ্চের পাশে একটি জায়গায় বসেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচিও ছিলেন।

শুভেন্দু বলেন, “বাংলার অন্যতম বিজেপি নেতা হিসাবে কথা দিচ্ছি, আমরা বিজেপিকে সরকারে আনলে যোগ্য-অযোগ্য একমাসের মধ্যে বেছে ওএমআর পুড়িয়েছেন, সিবিআই গাজিয়াবাদ থেকে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করে বলে দিয়েছেন কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য, পেপার্স তো আপনার কাছে আছে, এমএলএ ভাই, এমপির আত্মীয় এদের বাঁচানোর জন্য এই নাটক করেছেন। শিক্ষিকারা তাড়া করেছেন গুণ্ডাদের। লাল চুল কানে দুলদের তাড়া করেছেন শিক্ষিকারা। সব্যসাচী দত্তের কোনও কাজ ছিল না। ওকে মমতা পাঠিয়েছে। ওকে (সব্যসাচী দত্তকে) গুণ্ডামি করে নম্বর বাড়াতে হবে।”