সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“বেছে বেছে নির্বাচনের আগেই ভোটার তালিকা সংশোধনের কী প্রয়োজন পড়ল? বিগত নির্বাচনের পর থেকে এতদিন সময় পাওয়ার পরেও এই প্রক্রিয়ার শুরু করা গেল না কেন?” জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেললো দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালত কমিশনের এমন পদক্ষেপের আইনি অধিকার আছে স্বীকার করলেও, যে সময়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আবেদনকারীরা যেহেতু অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চাননি, সে কারণে এই পরিস্থিতিতে বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বাধা দিল না সুপ্রিম কোর্ট। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে আগামী ১ অগস্ট। তাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে তার আগে, ২৮ জুলাই। এই মামলার বিষয়ে জবাবি হলফনামা ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিশনকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনকে বেশ কিছু বিষয়ে সমালোচনা করলেও তালিকা সংশোধনের কাজে কোনও স্থগিতাদেশ দিল না সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে যে, ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। কিন্তু নির্বাচনের এত কাছে এসে এই ধরনের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের মতে, এই সময়ে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু করা ‘প্রশ্নের উদ্রেক করে’ এবং এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এবং নির্বাচনের আগে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোও কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি চলছে।
কমিশনকে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম রাখা বা ভোটদানের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য ১১টি প্রমাণপত্রের নাম দাখিল করতে। যাতে আধার কার্ড, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র এবং রেশন কার্ডের মতো জনপ্রিয় পরিচয়পত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত করা থাকে।
বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনী প্রক্রিয়ার গুরুত্বের কথা মেনে নিলেও তা রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে কেন করা হচ্ছে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মহুয়া মৈত্র সহ একগুচ্ছ আবেদনের শুনানি হয় এদিন। শুনানি চলাকালীন দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনের কাছে এও প্রশ্ন তুলেছে যে, বিশেষ এই ভোটার তালিকা সংশোধনীতে আধার কার্ডকে কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে না? আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে আধার হল একটি গ্রহণযোগ্য প্রমাণ। কিন্তু, বিহারের ক্ষেত্রে কমিশন সেটাকেও বৈধ প্রমাণ বলে গণ্য করছে না। তখন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে যে, কেন? কেন আধারকে গ্রাহ্য বলে ধরা হবে না?
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আদালতকে জানান, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধারকে ব্যবহার করা যাবে না। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এর জবাবে বলেন, নাগরিকত্ব এমন একটা ইস্যু যা ভারতের নির্বাচন কমিশন ঠিক করে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন।