তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস ২১ জুলাইয়ের সভা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তুঙ্গে। এই আবহেই ফের একবার চর্চার কেন্দ্রে বিজেপির দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ। কয়েকদিন ধরে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল—তিনি কি তৃণমূলে যাচ্ছেন?—সেই সম্ভাবনাকে কার্যত নস্যাৎ করলেন তিনি নিজেই। বরং উলটে তিনি কটাক্ষের তির ছুঁড়লেন সেই সমস্ত বিজেপি নেতাদের দিকে, যারা একসময় তৃণমূলে ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ ঘোষ বলেন, “ডিম ভাতের উৎসব হয়, তবে আমি দেখেছি এবার আমাদের পার্টির লোকেদেরও উৎসাহ বেশি। যাঁরা ওখানে ডিম ভাত খেয়ে এখানে এসেছেন, তাঁদের মধ্যেই উৎসাহ বেশি।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, দিলীপ ঘোষ পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের, যারা এখনও তৃণমূলের প্রভাব বা সংস্কৃতিতে মজে রয়েছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, কিছুদিন আগেই দিলীপ ঘোষকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায় যে তিনি হয়তো আবার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন। দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব, এমনকি বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের উত্থান—সব মিলিয়ে এই জল্পনা আরও জোর পায়। তবে শমীকের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তারপর দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর দিলীপ ঘোষ যেন বিজেপির ঘরেই ফিরে এসেছেন পুরো শক্তিতে।
বিশেষ করে সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলায় সফর ও সভা রয়েছে, যেখানে দিলীপ ঘোষকেও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তা থেকেই স্পষ্ট, দিলীপ ঘোষ এখনও বিজেপির ‘অ্যাকটিভ’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মুখ। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দিলীপ ঘোষের এই ভাষা এবং মন্তব্যের ধরণ নতুন নয়। তাঁর কথাবার্তায় থাকে স্পষ্টতা, তীক্ষ্ণতা এবং অনেক সময় বিতর্কও। তবে একুশে জুলাইয়ের আগে তাঁর এই “ডিম ভাত” মন্তব্য আবার নতুন করে উস্কে দিল দলবদলু রাজনীতির বিতর্ক।
অনেকেই বলছেন, দিলীপের এই আক্রমণ আসলে বিজেপির ভেতরের দুর্বলতা ঢাকতে এবং নিজের অবস্থান মজবুত করতে কৌশলগত পদক্ষেপ। আবার কেউ বলছেন, তৃণমূলের জনসংযোগ এবং মাঠপর্যায়ের শক্তিকে কৌশলে স্বীকার করে নিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ।
যাই হোক, বাংলার রাজনীতির মাঠে এই মন্তব্য ফের প্রমাণ করল—দিলীপ ঘোষ এখনই রাজনীতির পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছেন না, বরং নতুন ইনিংসের প্রস্তুতিতেই রয়েছেন।