সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘এভাবে পড়শি রাজ্যের জলে আমাদের এলাকা বারবার বানভাসি হলে প্রয়োজনে আমরা ড্যাম ভেঙে দিতে বাধ্য হব।’ বুধবার দার্জিলিঙের লালকুঠি থেকে প্রশাসনিক বৈঠকে ফের পড়শি রাজ্য থেকে জল ছাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টির জেরে তৈরি হওয়া দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিতে টানা কয়েক দিন ধরে ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার দার্জিলিঙে প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান তুলে ধরে তিনি জানান, ‘দুধিয়ার অস্থায়ী সেতু আর সাত দিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে। পাশাপাশি, সেখানে একটি স্থায়ী সেতুর কাজও চলছে, যা বছর দেড়েক আগেই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পায়ে হাঁটার একটি ছোট সেতু তৈরি করা হয়েছে।’ দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন , ‘দুর্যোগে ৭০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। এক পয়সাও কেন্দ্র দেয়নি।’ ফের ক্ষোভপ্রকাশ করলেন তিনি। এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। ত্রাণ তহবিল ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে। সেই কথা আবারও জানিয়েছেন মমতা। যারা চাইবেন, তাঁরা এই আবেদনে সাড়া দিতে পারেন বলে জানানো হয়েছে।
বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে টানা চারদিন ধরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বৃহস্পতিবার ফেরার কথা রয়েছে তাঁর। তবে তার আগে বুধবার ফের দার্জিলিংয়ের রাস্তায় নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই প্রশাসনিক বৈঠক করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখানেই সিকিম নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সিকিমের পরিস্থিতি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘১৪ টা হাইডেল পাওয়ার সিকিমে তৈরি করা হয়েছে, প্রকৃতীকে নিয়ে খেলা যায় না, সিকিমকে নিয়ে ভয় হচ্ছে, কোনও ডিজাস্টার ঘটে যেতে পারে উত্তরাখণ্ডের মতো, ধস সবচেয়ে বড় সমস্যা।’
প্রবল বৃষ্টি এবং ভুটানের জলে সপ্তাহখানেক আগে কার্যত তছনছ হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি এলাকা। বর্তমানে প্রশাসনের প্রচেষ্টায় বিপর্যয় কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাহাড়। তবে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় এখনও বিভিন্ন এলাকার ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন বহু মানুষ। অনেকের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ধসের জেরে বন্ধ বেশ কয়েকটি রাস্তা।
এই পরিস্থিতিতে দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করতে গত রবিবার ফের উত্তরবঙ্গ যান মমতা। বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন তিনি। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ে মোট ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, এরমধ্যে দার্জিলিঙে মৃতের সংখ্যা ২১। মুখ্যমন্ত্রী জানান, দার্জিলিঙের ৯টি ব্লক এবং ৪টি মহকুমা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০-রও বেশি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মমতার কথায়, ‘ওরা তলিয়ে যেতে পারতেন। ভগবানের কৃপায় বেঁচে গিয়েছেন।’
জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভুটানের জলেই উত্তরবঙ্গে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। পায়ে হেঁটে গোটা এলাকা ঘুরে দেখা এবং ত্রাণসামগ্রী বিলি করার পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের এক জন করে সদস্যের হাতে চাকরির নিয়োগপত্রও তুলে দিলেন তিনি।