সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবায় দীর্ঘদিন ধরেই একটি বড় অভিযোগ ছিল—একটি নির্দিষ্ট সংস্থার একচেটিয়া আধিপত্য। বিশেষ করে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিপুল বাজার দখল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে ইন্ডিগোর পরিষেবায় বিপর্যয়, ফ্লাইট বাতিল, দেরি এবং যাত্রী হয়রানির ঘটনায় সেই অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক।
ভারতের আকাশে খুব শিগগিরই ডানা মেলতে চলেছে তিনটি নতুন বিমান সংস্থা। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক ইতিমধ্যেই আল হিন্দ এয়ারলাইন্স এবং ফ্লাই এক্সপ্রেস—এই দুই সংস্থাকে বিমান পরিষেবা চালুর জন্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) প্রদান করেছে। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশভিত্তিক নতুন বিমান সংস্থা শঙ্খ এয়ার প্রাথমিক ছাড়পত্র পেয়েছে এবং আগামী বছর থেকেই পরিষেবা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ?
গত কয়েক বছরে ভারতের বিমান শিল্পে একের পর এক সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেট এয়ারওয়েজ, গো ফার্স্টের মতো বড় নাম বাজার ছেড়েছে। অন্যদিকে, এয়ার ইন্ডিয়া টাটা গোষ্ঠীর হাতে যাওয়ার পর বাজার কার্যত দুই সংস্থার দখলে চলে যায়—ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া গ্রুপ।
বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে,
প্রায় ৬৬ শতাংশ বাজার দখলে ইন্ডিগো,
প্রায় ২৫ শতাংশ এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের হাতে,
অর্থাৎ মোট মিলিয়ে ৯০ শতাংশেরও বেশি বাজার একটি কার্যত দ্বৈত আধিপত্যে (duopoly)।
এই একচেটিয়া পরিস্থিতির ফলেই পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে মনে করছেন বিমান যাত্রী ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সাম্প্রতিক নিয়ম পরিবর্তনের জেরে ইন্ডিগোর পরিষেবায় ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পর সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ এবং যাত্রীদের অসন্তোষের চাপেই নতুন বিমান সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়ার পথে হাঁটে কেন্দ্র।
কী বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী?
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু বলেন,
“ভারতীয় আকাশে উড়ান চালাতে আগ্রহী নতুন এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। শঙ্খ এয়ার ইতিমধ্যেই NOC পেয়েছে, আর আল হিন্দ এয়ার ও ফ্লাই এক্সপ্রেস এই সপ্তাহেই ছাড়পত্র পেয়েছে।”
মন্ত্রী আরও জানান, এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু প্রতিযোগিতা বাড়ানো নয়, বরং যাত্রী পরিষেবার মান উন্নত করা এবং আঞ্চলিক সংযোগ জোরদার করা।
কোন সংস্থা কীভাবে শুরু করবে?
আল হিন্দ এয়ারলাইন্স
কেরালার আল হিন্দ গ্রুপের মালিকানাধীন এই সংস্থা প্রথমে একটি আঞ্চলিক কমিউটার এয়ারলাইন্স হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
বিমান: ATR 72-600
হাব: কোচি
লক্ষ্য: ছোট ও মাঝারি শহরের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি
ফ্লাই এক্সপ্রেস
এই সংস্থাটিও আগামী বছর থেকেই বাণিজ্যিক উড়ান শুরু করতে পারে। প্রাথমিকভাবে স্বল্প দূরত্বের রুটে জোর দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শঙ্খ এয়ার
উত্তরপ্রদেশভিত্তিক এই নতুন সংস্থার লক্ষ্য স্পষ্ট—
লখনৌ
বারাণসী
আগ্রা
গোরক্ষপুর
এই গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে আকাশপথে সংযোগ বাড়ানো। ২০২৬ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
যাত্রীদের জন্য কী বদল আসতে পারে?
নতুন বিমান সংস্থার আগমন মানেই প্রতিযোগিতা বাড়বে। তার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে—
ভাড়া কমার সম্ভাবনা
ফ্লাইটের বিকল্প বাড়া
পরিষেবার মান উন্নত হওয়া
আঞ্চলিক শহরগুলির সঙ্গে বড় শহরের সংযোগ জোরদার হওয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি নীতিগতভাবে সমান সুযোগ বজায় রাখা যায়, তাহলে ভারতের বিমান শিল্পে এই সিদ্ধান্ত একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে।