সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
কালনা পুরসভার ফোনটি বেশ কিছুক্ষণ বাজছিল। ওই ফোনটি থাকে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানের ঘরে। আর সেই ফোন তুলতেই কান গরম হয়ে গেল কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানের। ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর ওই হুমকি ফোনে ৫ লক্ষ টাকা দাবিও করা হয়।
শেক্সপিয়ার সরণি থানায় অভিযোগ দায়ের হতেই অ্যাকশনে নামে পুলিশ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিড স্ট্রিটের এমএলএ হোস্টেল থেকে গ্রেফতার করা তিন ব্যক্তিকে। ধরা পড়েছে জুনেদুল হক চৌধুরী, শুভদীপ মল্লিক, তাসলিম শেখ নামে তিন জন। এদের প্রত্যেকের পরিচয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
খতিয়ে দেখা হয় এমএলএ হোস্টেলের সিসিটিভি ফুটেজ। তা দেখেই শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। ঘটনায় তাঁদের কী ভূমিকা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। এমনকী তাঁরা কীভাবে এমএলএ হস্টেলে গেলেন, কী যোগাযোগ তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই হুমকি ফোনের খবর প্রকাশ্যে চলে আসায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। এই কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। আর তাঁকে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে দাবি করা হয়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস থেকে ফোন করা হচ্ছে। এই নিয়ে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, “টেলিফোনে বলা হয়, অভিষেক দার অফিস থেকে বলছি। ৫ লাখ রেডি রাখুন। সঠিক সময়ে নিয়ে নেওয়া হবে।” এই ফোন যে সন্দেহজনক সেটা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানের। তাই তিনি তড়িঘড়ি পুলিশে ফোন করে দেন।
সূত্রের খবর, আইপ্যাক ডিরেক্টর প্রতিক জৈনেরও নাম নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্পষ্ট বলা হয়, “আপনাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। থাকতে গেলে দেখা করুন। টাকা নিয়ে আসুন।” দেখা করার জন্য এমএলএ হস্টেলে ডাকা হয়। একইরকম ফোন যায় কাটোয়ার পুর প্রধান সমীর সাহার কাছেও।
কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে জানালে সেখান থেকে থানায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়। তারপরই ফাঁদ পাতে পুলিশ। টাকা দিতে যাওযার নাম করে সাদা পোশাকে পুলিশ যায় আনন্দবাবুর সঙ্গে। এমএলএ হস্টেল থেকে ধরা হয় তিনজনকে। কোন এমএলএর নাম করে রুম বুক রয়েছে তার খোঁজ শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়কের নামে বুকড ছিল ঘরটি। বিধায়কের নাম নিখিলরঞ্জন দে। তিনি কোচবিহারের বিজেপি বিধায়ক। ইমরান শেখের নামে রুম বুক করেছিলেন। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিজেপি বিধায়ককে তদন্তে জন্য ডাকার প্রক্রিয়ায় শুরু করছে পুলিশ।
অভিষেকের নাম করে আগেও নানা তোলাবাজির চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে একটাও সফল হয়নি। এবারও একইরকম চেষ্টা করা হল। সেটাও বিফলে গেল।