সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
আর জি কর কাণ্ডে বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সম্প্রতি কিছুদিন আগে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী আর্জি জানিয়েছিলেন উৎসবে ফেরার জন্য। শাসকদলেরও আর্জি ছিল, দুর্গাপুজো কোন উৎসব নয়। একে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের অন্ন সংস্থান হয়। ঢাকি, পটুয়া, বস্ত্র ব্যবসায়ী, খুচরো বিক্রেতারা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন এই সময়টার জন্য।
নির্যাতিতা বিচার পাক সবাই চায়। কিন্তু আন্দোলনের নামে তাঁদের পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যদিও সেই ঘটনার পর বামেদের তরফে প্রত্যুত্তর এসেছিল ‘উৎসবে ফিরব না।’
কিন্তু গতকাল শপিং মলে সিপিএমের বাম নেতা শতরূপ ঘোষেকে দেখা গেছে দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এক ঝাঁ চকচকে এক শপিং মলে পুজোর কেনাকাটিতে মন দিতে। ফেসবুকে সেই ছবি ঘুরে বেড়াতেই ঢোঁক গিলে নেটিজেনরা চন্দ্রবিন্দুর গান গাইছেন।আন্দোলনের নামে এবারের পুজো বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছিল সিপিএম। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থেই উৎসবে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছেন, সেখানে আন্দোলনের হুজুগ তুলে সিপিএম পুজো বানচালের প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই বামেদের এক নেতা কিনা উৎসবে না ফিরতে চেয়েও আশ্চর্যজনক ভাবে উৎসবের জন্য কেনাকাটা করতে পৌঁছে গেলেন শপিং মলে।
পুঁজিবাদের তুমুল এক প্রতীক ওই ‘পশ’ শপিং মলে তাঁর ছবি দেখে তাই সিপিএম সমর্থকরাও যে বাক্যি হারাবেন তা বলাই বাহুল্য ।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ জানিয়ে চোখা চুখি ভাষণে হাত তালিও কুড়িয়েছিল প্রচুর। তবে লাল শিবিরের ‘মুখের কথা’ ও ‘মনের কথায়’ ফারাক স্পষ্ট হল পুজোর দোরগোড়ায়তেই। উৎসবে না ফেরার বার্তা দিলেও, উৎসবের শপিংয়ে দিব্যি মেতে উঠলেন সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ। শপিং মলে বাম নেতার কেনাকাটার ছবি সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসতেই ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগে বিদ্ধ হল রাজ্য সিপিএম।
অবশ্য বামেদের উৎসবে না ফেরার ছলনা এই প্রথম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সিপিএমের দলীয় মুখপত্র ‘গণশক্তি’তে পুজোর বিজ্ঞাপন চরম জন্ম দেয়। উৎসবে না ফেরার বার্তা দেওয়া সিপিএমের মুখপত্রে এহেন বিজ্ঞাপণকে আক্রমণ জানিয়ে কুণাল ঘোষ লিখেছিলেন, ‘ফেসবুকে বিপ্লব-পুজো নয়, উৎসব নয়। আর টাকা পেলে উল্টো শ্লোগান কাগজে।’
এর প্রতি উওরে কুণাল লেখেন, ‘কমরেড এটা পার্টির কাগজ, বাণিজ্যিক নয়। টাকার জন্য আত্মাকে বিক্রি করা যায় না। এটা দ্বিচারিতার দৃষ্টান্ত। সেই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় শতরূপের শপিংয়ের ছবি ভাইরাল হতেই কটাক্ষ করেছেন নেটিজেনরা। কেউ লিখেছেন, ‘এদের দলটাই ভণ্ড।’ কারও মতে, ‘জন্ম থেকেই এই সিপিএম দলটা দ্বিচারিতা করে চলেছে।’
যে ব্যক্তি এই ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘উৎসবে ফিরছি না, কিন্তু উৎসবের শপিংয়ে আছি।’
সমালোচনার জবাবে শতরূপও পালটা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তাঁর দাবি, ভাইজিকে নিয়ে জামা কিনতে গিয়েছিলে। এ নিয়ে শাসকদলকেও একহাত নিয়েছেন তরুণ বাম নেতা।
উল্লেখ্য, গোটা বাংলা দুর্গাপুজো ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে শুধু উৎসবেই নয়, অর্থনৈতিক পরিসরেও। মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে শোলা, প্যান্ডেল, আলোর কাজ যাঁরা করেন, প্রত্যেকের নজর থাকে আশ্বিণে। দেবীর খুঁটিনাটি সমস্ত সাজগোজ শেষে পুজো একেবারে শেষ হলে পর অর্থাগম হবে, এই আশায় গোটা বছর দিন গোনেন তাঁরা। উৎসবে ফিরছি না এই হিড়িকে এবছর বরাত না পেলে সেসব মানুষের কী হবে?
তা ভাববার নয় কি।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে সম্পাদক শাশ্বত বোস বলছিলেন, কলকাতার পুজোয় কমবেশি ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক আদানপ্রদান হয়ে থাকে। অঙ্কটা কত বড়, তা বোঝাই যাচ্ছে সূত্রের খবর।