সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
থ্রেট কালচারের অভিযোগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ জন ছাত্রকে সাসপেন্ড করেছিল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষর সেই নির্দেশ উড়িয়ে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রকে ক্লাস করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, ওই পাঁচ ছাত্র কলেজে ক্লাস করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় বসতে পারবেন। এছাড়া অকারণে কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁরা থাকতে পারবেন না। সাসপেন্ড হওয়া পাঁচ ছাত্রর হয়ে এদিন আদালতে মামলাটি লড়েন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সাত ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীকে সাসপেন্ড করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাদের ক্লাস এবং হস্টেলে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়। ওই মামলায় গত ৮ নভেম্বর কলকাতা বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়াদের ক্লাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিনও সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়াদের হয়ে মামলাটি লড়েছিলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন আদালতে কল্যাণ বলেন, “পড়ুয়াদের সাসপেন্ড করার ক্ষমতা কলেজ কাউন্সিলের নেই। এটা করতে পারে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।” এখানেই না থেমে আদালতে তিনি এও অভিযোগ করেন, “আন্দোলনকারীদের থ্রেটের মুখে পড়ে ওই সাত জন ছাত্রছাত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এটা কি থ্রেট কালচার নয়?”
আরজি কর কাণ্ডের জেরে সামনে আসে থ্রেট কালচার। যার জেরে আরজি কর, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল-সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কমিটি গড়ে একাধিক ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীকে সাসপেন্ড করেছিল। সম্প্রতি নবান্নে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক থেকে এ ব্যাপারে বড় প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। আরজি করের অধ্যক্ষর উদ্দেশে জানতে চেয়েছিলেন, “স্বাস্থ্যবিভাগকে না জানিয়ে কীভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত এভাবে নষ্ট করে দিতে পারে?”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেছিলেন, “অন্যায়কে সমর্থন করার প্রশ্নই নেই। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারও বক্তব্য তো শোনা দরকার। তাছাড়া তদন্ত ছাড়া এভাবে কোনও পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়া ঠিক নয়।”
মঙ্গলবার শুনানির সময়ে সাসপেন্ডেড ছাত্ররা আদালতে সওয়াল করেন, কোনও নিয়ম না মেনে ৬ মাসের জন্য তাঁদের সাসপেন্ড করেছে কলেজ। অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির মতামত না নিয়েই সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি। তাঁরা বলেন, “আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেওয়া হয়নি।” সাসপেন্ডের বিজ্ঞপ্তি খারিজ করারও আবেদন করেন তাঁরা।
পাল্টা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কলেজের উচ্চপদস্থ কর্তাদের ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। সে সময়ে কর্তৃপক্ষের তরফে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তারপর ঘেরাও ওঠে। কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “আমরা চাপের মুখে তক্ষুনি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। তা না হলে আমরা যদি হাসপাতাল বন্ধ করে দিতাম তাহলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। আর কোনও বিকল্প না থাকায় আমরা বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী পদক্ষেপ করি।”
ইতিমধ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের একাংশের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারে অভিযোগে সম্প্রতি পাল্টা সংগঠন গড়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের তরফেই এদিন আদালতে সওয়াল করা হয়েছিল।