সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
প্রায় আড়াই বছর পর জামিন পেলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বলে পরিচিত অর্পিতাকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। সম্প্রতি মায়ের মৃত্যুর পর প্যারোলে ছিলেন অর্পিতা। তার মধ্যেই জামিন অর্পিতার। ৫ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে অর্পিতাকে জামিন দিল বিশেষ ইডি আদালত। পার্থ এবং অর্পিতাকে ২২ জুন ২০২২-এ গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ৫২ কোটি টাকা উদ্ধারের পর অর্পিতাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের ৮৫৭ দিন পর তিনি জামিন পান।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যের পর জামিন পেলেন অর্পিতা। আপাতত অন্য কোনও মামলায় অভিযুক্ত নন তিনি, তাই জেলমুক্তির সম্ভাবনা জোরাল হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ, অর্পিতাকে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা এলাকা ছাড়তে পারবেন না তিনি।
২০২২ সালের ২২ জুলাই, প্রথমে অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেখানে নগদ টাকার পাহাড় খুঁজে পায় ইডি। সেই ছবি ছিল চমকে দেওয়ার মতো। এরপরই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। প্রকাশ্যে আসে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা। এই গ্রেফতারির কয়েকদিন পর বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট থেকেও মিলেছিল কোটি কোটি নগদ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ কোটি টাকা, ৩ কোটি টাকার গয়না উদ্ধার করে ইডি।
এর আগে দেখা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলাতেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে জামিনের জন্য। একমাত্র অর্পিতার ক্ষেত্রেই দেখা গেল, নিম্ন আদালত থেকেই জামিন পেয়ে গেলেন তিনি। অর্পিতা আদালতে বারবার দাবি করেছেন, ওই টাকা তাঁর নয়। এছাড়া, অর্পিতা মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হলেও নিজেকে কখনও প্রভাবশালী বলে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেননি। সেই কারণেই জামিন পাওয়া সহজ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের করা মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ন’জনের জামিন নিয়ে একমত হতে পারেননি কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি। মামলাটি এ বার তাই তৃতীয় বেঞ্চে পাঠানো হল। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ওই মামলাটি পাঠিয়েছেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে।
একক বেঞ্চেই মামলাটি শুনবেন তিনি। সেখানেই পার্থ-সহ পাঁচ জনের জামিনের আবেদনের ফয়সালা হবে। ফলে পার্থদের ভবিষ্যৎ এখন বিচারপতি চক্রবর্তীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
পার্থদের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়েছিল হাই কোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। গত ২০ নভেম্বর এই মামলার রায় দেয় বেঞ্চ। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় ন’জনেরই জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু বিচারপতি সিংহ রায় তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি চার জনের জামিন মঞ্জুর করলেও পার্থ-সহ বাকি পাঁচ জনের ক্ষেত্রে জামিনের বিরোধিতা করেন। দুই বিচারপতির কাছ থেকেই জামিন পান কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, সুব্রত সামন্ত রায় এবং চন্দন ওরফে রঞ্জন মণ্ডল। জামিন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয় পার্থ, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিন্হার ক্ষেত্রে।
ডিভিশন বেঞ্চের কোনও মামলায় বিচারপতিরা একমত হতে না পারলে মামলাটি কোন বেঞ্চে যাবে, তা স্থির করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি তৃতীয় কোনও বেঞ্চে মামলাটি ফয়সালার জন্য পাঠান। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম সোমবার এই মামলাটি পাঠিয়েছেন বিচারপতি চক্রবর্তীর একক বেঞ্চে। চলতি সপ্তাহেই এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।